উদ্যোক্তা, ব্যবসা না চাকরি – আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

আমাদের দেশের শিক্ষা অর্জন সহজতর হলেও পরিণতি কঠিন থেকে কঠিনতর। আমরা ছোটবেলা থেকে শুধু পড়াশোনা পড়াশোনা বুঝি। আর পড়াশোনা না করলে আমাদের কোন উন্নতি ও আসলে সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কি আমাদের আসলেই অর্থ অর্জনের জন্য কি যথেষ্ট। সমাজে তো সকলে আসলে অর্থকে এই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিষয়টা খুবই ভাবার বিষয়। যখন আসলে পড়াশোনা শেষ হয়ে যায় তখনই বুঝা যায় মার্কেটের কি অবস্থা। আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ওদের জন্য পড়াশোনা তো জীবন। পড়াশোনা ছাড়া এই শ্রেণীর মানুষদের জীবন অচল। কেননা একমাত্র পড়াশোনায় ওদের জীবনের চাকা বদলাতে পারে। আর তাই আমাদের সমাজের বেশ বড় একটি অংশই চাকুরীজীবী। উনারা কোন একটা ব্যবসা করার নাম শুনলেও ভয় পান। আসলে ভয় পাবারও বিষয় কেননা যে প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্ট আসার কথা সেটা আসবে কোত্থেকে। সেটা হয় বাবা থেকে নিতে হবে তা না হলে হবে কি করে এর টাকা জমিয়ে জমিয়ে। আর তা না হলে কারো থেকে ধার নেওয়া কিন্তু এভাবেই আসলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ জনগণ। আর আমরা ছোটবেলা থেকে শুধু পড়ছি আর পড়ছি। পড়া ছাড়া যেন আর জীবনে কিছুই নেই। কিন্তু এক্সট্রা কারিকুলার চেক কাজ সেগুলো শেখার ক্ষেত্রে আবার কার্পণ্য। এ কারণে আমাদের থার্ড ইকোনমির কান্ট্রিগুলো আগাতে পারে না। ওদের শিক্ষা ব্যবস্থাটাই থাকে চাকরিকরে খাওয়ার উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য। এখন যেটা সমাজে দেখা যাচ্ছে অর্থ উপার্জনের জন্য আসলেই টেকনোলজির উপরে শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। টেকনোলজিতে যারা পারদর্শী প্রযুক্তিনির্ভর ওনারা যেকোনো অর্থ উপার্জন করতে প্রস্তুত এবং নির্ভরযোগ্য। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের টেক ফিল্ডেই অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো প্রাচীন যুগের তৎকালীন থিওরি দিয়ে সাজানো। আমরা এখনো কম্পিউটার বলতে এবাকাসের আমলের কথা বুঝি। আমাদের উচিত এখন এআই আমরা সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে পারবো কিভাবে আমরা সেই সফটওয়্যারকে দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাতে পাবো, কি করে তৈরি করতে হয়। সেই শিক্ষাগুলো আমাদের ইউনিভার্সিটি লেভেল এর আগে কোথাও পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যদিও শহর অঞ্চলে ছাত্রীরা আপডেট থাকতে পারে কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় আমাদের ম্যাক্সিমাম অঞ্চল থাকে অনুন্নত বা পিছিয়ে পড়া। সেই পিছিয়ে পড়া অনুন্নত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা টেকনোলজির যেই ভাবটা বুঝে বা যেই ভাবটা দেখে থাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ হয়ে যায়। ভাবটা থাকে সবসময় এন্টারটেইনমেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া, সকল অবৈধ টপিক গুলোতে। প্রযুক্তি এখন হাতের মুঠোয়। প্রযুক্তির ব্যবহার জানি বলেই এখন সমাজ অনেকটা সহজ। তবে শুধু যোগাযোগই আমাদের দেশে ব্যবহারযোগ্য ফিচার। বিনোদন আর সকল বিতর্ক মূলক কাজ গুলোই আসলে এই অঞ্চলের লোকজন প্রযুক্তির মাধ্যমে করে থাকে। অনেক কাল বন্ধুত্ব করে ফেলছি প্রযুক্তিকে। এবার একটু পজিটিভ বিষয়গুলো বলি। পজিটিভ বিষয় আসলে অনেক। আজ প্রযুক্তি আছে বলেই আমরা সহজে যোগাযোগ করতে পারছি ব্যবসা করতে পারছি এবং দেশের সংস্কৃতি, ব্যবসা, নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আমাদের ব্রেন স্টর্মিং হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া আছে বলেই আমরা আজকে পুরো বিশ্বকে চিনতে শিখেছি। আমরা ঘরে বসে ব্যবসা করতে পারছি। এখন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সব কিছুই করা যায়। এখন বৃষ্টি হচ্ছে আমরা কতটুকু করতে পারছি। আর এই যে চাকরি চাকরি করে আমরা দৌড়তে থাকি কতজনের সংসারী বা চলে ঠিক করে। কিন্তু আবার চাকরি না করলে এটা সময়ে অর্থ থাকেনা কারন দেশে তেমন কর্মসংস্থানও নেই। তাই তো দেশে কর্মসংস্থান তৈরি করার জন্য সব সময় গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কিন্তু কর্মসংস্থান টা এখন আমাদের নিজেদেরই তৈরি করতে হবে। তাহলে কি লাগবে প্রযুক্তির ব্যবহার, জ্ঞান এবং নতুন চিন্তা ভাবনা। তাই শিক্ষা ব্যবস্থাটা আপগ্রেড হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অর্থ উপার্জন করাটা খুবই কঠিন বর্তমান সমাজে। আর যেটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আমরা খুবই সামান্য অর্থই উপার্জন করা সামর্থ্য লাভ করি। মূলত আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান যত বাড়বে ততই আমরা অর্থ লাভ করার সুযোগ তৈরি করতে পারব। এবার আসি ব্যবসা সম্পর্কে। যাদের আগে থেকেই ব্যবসা আছে। উল্লেখযোগ্য খাত খাদ্য, চিকিৎসা, ট্রান্সপোর্ট এই সকল যেগুলো ট্রেডিশনাল বিজনেস আছে। এ সকল খাতে আসলে আর তাদের পিছে ফিরে তাকাতে হয় না। আর যারা ছোটখাটো ব্যবসায়ী, প্রত্যেকদিনের একটা ইনকামের উপর তাদের ডিপেন্ড করে থাকতে হয়, এটা আসলে মূলত চাকরিই। কারন আপনাকে নির্দিষ্ট একটা টাইম প্রত্যেকদিন সময় দিতেই হবে। আপনাকে নিজে উপস্থিত থেকে ১৭ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করতে হবে। অর্থাৎ সেলসম্যানের যে কাজটা মূলত বেশিরভাগ ব্যবসায়ী করে থাকেন। এতে দুটো উপাই রয়েছে যেটা আপনি চাইলেই কিছু খাত আছে মন মত দাম রেখে ফেলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে লাভ করার অংশটা অনেকটাই বেড়ে যায়। আবার কিছু সেলস আছে যেগুলো আসলেই সেল করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। মূলত এর জন্য প্রয়োজন একটা ভালো জায়গা যেখানে আপনি অনেক ট্রাফিক পাবেন প্রত্যেকদিনের। সে সকল জায়গাতেই আপনার ব্যবসার পরিসর বাড়বে। তো মূলত ব্যবসায় চাকরি থেকে অনেক বেশি। যেটা আসলে দেশের জন্য চাকরির তুলনা এখন ব্যবসায়ী ভালো একটি পেশা। সবাই কিছু না কিছু বিক্রি করছেন। আমরা যারা চাকরি করছি কারো কিছু বিক্রি করছি। এক পরিশ্রম বিক্রি আরেক মেধা বিক্রি। বিক্রি ছাড়া আসলে এখানে আসলে কিছুই চলে না। একজন উল্লেখযোগ্য সেলসম্যান বা দক্ষ সেলসম্যান হওয়ার জন্য আপনার একেবারে হাতে-কলমে ফিল্ড, ফিল্ড নলেজ যেটাকে বলি ঢাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেই কাজের ধারণা আমাদের অবস্থায় ক্রমেই উল্লেখ বা যুক্ত করা নেই। এই কাজ সম্পর্কে আমাদের কখনোই কোন রকমের ট্রেনিং দেওয়া হয় না। আমরা শুধুই আমাদের পাঠ্যপুস্তক এর বইয়ের মধ্যে পড়ে পড়ে নিজে নিজে অনুধাবন করতে হয়। যেটা মোটেও আমাদের সম্যক জ্ঞান প্রদান করে না। তাহলে যাদের আগে থেকেই বাবাদের ব্যবসা ছিল বা পূর্বপুরুষদের ব্যবসা ছিল। ওরা ছোটবেলায় দোকানে থাকতে থাকতে বসতে বসতে যেটা শিখেছে সেটা যাদের ব্যবসা নেই তারা কখনোই সেই বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবেন না। তাই ব্যবসা করার জন্য আমাদের প্রপার ট্রেনিং এর প্রয়োজন রয়েছে। আর তাই চাকরিতে এখন আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা দেশে খুবই কঠিন। প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। কারণ যে সেলারি প্রদান করা হয়ে থাকে চাকরির বাজারে যে পরিমাণ প্রতিযোগিতা সে হিসেবে একজন দক্ষ চাকুরিজীবীর বেসরকারি চাকরি লাইনে উপরে ওঠা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র যারা রয়েছেন তারাই নিরাপদ ধারায় থাকতে পারেন। কিন্তু বেসরকারিতে যারা চাকরি করেন তাদের সেই খোসা মাজায় চলেই থাকে চলেই থাকে। তবে কি আমাদের উত্তরণের পথ নেই। অবশ্যই আছে দেশে জনশক্তি অনেক বেশি তাই কর্মসংস্থান তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। আর তাই আমাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা যখন নতুন কোন সম্ভাবনা তার উন্মোচন করতে পারি তবেই আমরা বেকারত্ব দূরীকরণে দেশকে সহায়তা করতে পারবো। আর সেটি করার জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত যুব সমাজের নতুন ধরনের চিন্তাভাবনা। আমাদের নতুন চিন্তাভাবনাকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে এবং যারা করতে চাচ্ছে তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে। কারণ দেশের সমস্যার কোন শেষ নেই আমাদের দেশে অনেক বড় বড় সমস্যা যেগুলো সমাধান করতে পারি। আর উদ্যোক্তার কাজই হলো নতুন বিষয়ে কোন সমস্যাকে সমাধান করা। উদ্যোক্তারাই পারে দেশের অর্থনৈতিক চাকা কে সমৃদ্ধ করতে।

আর উদ্যোক্তা হওয়ার শিক্ষাটা তাই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই শিক্ষাটা আমরা পেতে পারি আমাদেরকে প্রযুক্তিগত শিক্ষাকে আরো জোরদার করতে পারলে। আমরা যদি এখনো সেই তৎকালীন থিউরিগুলো নিয়েই আউড়াতে থাকি তাহলে কখনোই ভাগ্যকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যে সাহস, যে শক্তি, যে মেধা তৈরি করে দেওয়া প্রয়োজন তা কিন্তু আমাদেরকে কি যারা শিক্ষা প্রদান করবেন তাদের কেউ ট্রেনিং দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। তাই কেবল চাকরির পেছনে না ছুটে, ব্যবসা যাদের নেই সেই চেষ্টা না করে, আমরা ব্যবসার বাইরে তুমি কোন সমস্যার সমাধান নিয়ে যখন ব্যবসা করতে যাবো তখনই আমাদের সফলতা আসবে। তার জন্য চাই অধ্যবসায়, উপযুক্ত গবেষণা এবং আত্মবিশ্বাস। উদ্যোগ তারাই পারে দেশের, দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে। তাই আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি যে সকল শিক্ষা প্রয়োজন। তাহলে প্রযুক্তিগত প্রসার ঘটানো এবং এই জ্ঞানকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। তাহলে আমরা আমাদের সকলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব। নতুন নতুন চিন্তাগুলোকে গ্রহণ করতে পারব। আমরা সকলেই চাইলে উদ্যোক্তা হতে পারি সেই মেধা আমাদের মধ্যে আছে সকলের মাঝেই। কিন্তু প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা, অর্থের অভাব আমাদের অনেক উদ্যোক্তারি মনটাকে ভেঙ্গে দেয়। তাই আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান যত ভাল হবে নিজেরাই নিজেদের ইনভেস্টর হতে পারব। কারণ এখন টেক ফিল্ডের উদ্যোক্তারাই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ধনী। আর টেক ফিল্ডে কাজ করার জন্য অর্থের প্রয়োজনও পড়ে না। কেবল মেধা খাটিয়েই অনেক টাকা উপার্জন করা সম্ভব। আর প্রতিষ্ঠান ও গড়ে তোলা সম্ভব। তাই আমাদের সকলের শিক্ষার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতাকে আরো উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে নিশ্চয়ই আমরা এখন পরিষ্কারভাবে বলতে পারি আশা করি আর চাকরি করি তা উদ্যোক্তা হওয়ার পরিচয়টা সকলের মাঝেই প্রচলিত করতে হবে।

Leave a Comment