এক কথায় পদার্থবিজ্ঞানঃ পদার্থবিজ্ঞান প্রস্তুতি ও সাজেশন (৩য় পর্ব)

২য় পর্বে আমরা মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ পর্যন্ত চলে এসেছি আমাদের একটা উদাহরণের মাধ্যমে। অনেকটা বেসিক ই আপনাদের এখন জানা হয়ে যাওয়ার কথা৷ মূলত ৩ টি মৌলিক রাশির সমন্বয়ে আমাদের এই বিষয়গুলো আমরা ব্যাখ্যা করে থাকি। দৈর্ঘ্য, ভর ও সময়। এই সকল চ্যাপ্টারের সকল রাশিকে ব্যবচ্ছেদ করলে আমরা এই তিনটি রাশিকেই খুঁজে পাব৷ তাহলে অনেকটা সহজ হয়ে যাচ্ছে না বিষয় গুলো। এখন এই সকল অধ্যায়ে বলের সঙ্গায়ন ঠিক থাকলেও পরিস্থিতি ভেদে আমাদের তা নির্ণয়ের জন্য গাণিতিকভাবে সূত্রের পার্থক্য পাওয়া যায়। যেগুলো পরিক্ষালব্ধ ফলাফল। আমরা ব্যবচ্ছেদ করলে অই ৩ টি রাশির ই সংমিশ্রণ পাবো। আর সাথে থাকবে ধ্রুবক। কিছু সার্বজনীন ধ্রুবক। যা আমাদের লাগবেই অই সূত্রের বা রাশিগুলোর মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য। সাধারণভাবে আমরা বল এর পরিমাণ বের করতে যে সম্পর্ক টা ব্যবহার করে থাকি তা ভর ও ত্বরণের গুনফল থেকে। কিন্তু মহাকর্ষ বল যখন আমরা বের করতে যাই তখন আমাদের মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের প্রয়োজন পড়বে। কারণ সেক্ষেত্রে আমরা অনেক বিশাল ভরের বস্তু নিয়ে কাজ করছি। তো ধ্রুবকের ব্যবহার গুলোকে আমাদের ধীরে ধীরে বস্তু হবে।

এইচএসসি এর পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্রে আমরা চতুর্থ অধ্যায়ে নিউটনিয়ান বলবিদ্যা অধ্যায়ে বলের বিভিন্ন প্রকার পেয়ে যাব। মূলত নবম-দশম শ্রেণিতে তো আমরা রৈখিক বলের সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে যাব। আর একাদশ-দ্বাদশে গিয়ে আমরা ঘূর্ণন গতির বিশদ জ্ঞান লাভ করব। যার জন্য আমাদের ভেক্টর অধ্যায়ের সঠিক জ্ঞান অর্জন করাও আবশ্যক। ভেক্টরের প্রকারভেদ গুলোর সাথে ভেক্টর গুণন সম্পর্কে ধারণা রাখা খুবই জরুরি। এই বিষয়গুলো আমরা সাইলর একাডেমির এপে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে প্রদান করব। যা পড়ে সহজেই একজন শিক্ষার্থী বিষয়গুলোকে বুঝে ফেলতে পারবে।

এবার অভিকর্ষ বিষয়টাতে ফিরে আসা যাক। অভিকর্ষ যেহেতু আমাদের সাথে পৃথিবীর বলের খেলা। তাই এর প্রয়োগ গুলো সম্পূর্ণ নির্ভর করে অভিকর্ষজ ত্বরণের উপর। আর তাই এই অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে পৃথিবীর আকৃতির উপর নির্ভর করে। পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ও গভীরতার উপরে। তার পাশাপাশি পৃথিবীর ঘূর্ণনের উপরেও।

এগুলোর বিস্তারিত উদাহরণ আমরা গাণিতিক ভাবে ব্যাখ্যা করার সময় আরো পান্তা-ভাত হয়ে যাবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা সেটা হলো এই অভিকর্ষজ বল কাজ করে থাকে সোজা পৃথিবীর কেন্দ্র বরাবর। এবার কেন্দ্র থেকে যত দূরে ততই বলের বৃদ্ধি ঘটবে আর যতই নিকটে আসবে ততই বলের পরিমাণ কমবে। তবে এই স্টেটমেন্ট এর উপরেও অনেক খেলা রয়েছে।

আমরা যদি কিশোর ভাইয়ের সাইকেলে চলে যাই। ধরলাম ভাই পাহাড় বেয়ে সাইকেল নিয়ে কোথাও পাড়ি দিচ্ছেন। তিনি যে জায়গা থেকে সাইকেলে উঠবেন সেই জায়গায় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অভিকর্ষজ ত্বরণ ছিল আদর্শ মান 9.8। কিন্তু যখনই তিনি পাহাড়ের উপরে ওঠা শুরু করলেন সাইকেলটা নিয়ে। ওনার উচ্চতা কিন্তু কেন্দ্র থেকে বাড়তে লাগলো যার দরুন উনার কিন্তু অভিকর্ষজ বলের মান পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে বেড়ে যাবে। কেননা g এর মান ও তখন কিন্তু বেড়ে যাবে। আবার ভাবলাম উনি সাইকেল টা নিয়ে গভীরে সুরঙ্গ পথে কোথাও যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে উনি কিন্তু পৃথিবীর গভীরে যাওয়ায় কেন্দ্রের কাছাকাছি। যে কারণে ওনার g এর মান কিন্তু কমে যাবে। তাহলে উনি কোথায় বল বেশি অনুভব করবেন? এটা তাহলে বোঝাই যাচ্ছে পাহাড়ের উপরে সাইকেল চালিয়ে উঠতে ওনার ভারী কষ্ট হবে। আর সুরঙ্গ পথ দিয়ে যেতে ওনার কম পরিশ্রম হবে। কারণ তিনি সুরঙ্গ পথে যাওয়ার সময় কম বল অনুভব করবেন। অর্থাৎ g এর বিরুদ্ধে গেলে আমাদের বল বেশি অনুভব করতে হবে আর g এর দিকে গেলে আমাদের কম বল অনুভব করতে হবে।

এবার চলে আসা যাক আবার বিদ্যুৎ অফিসের দিকেই। এই যে বিদ্যুৎ আমরা ব্যবহার করে থাকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। বিদ্যুৎ না থাকলে রাতে আমরা একেবারে রাতকানা হয়ে পড়ি। আর এখন তো ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগ। বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের জীবন দিনের বেলাও এখন অন্ধকার হয়ে পড়ে। এই বিদ্যুৎ এর ইতিহাস কিন্তু আজকের নয়৷ এর গবেষণা আর উদ্ভাবন যেমন আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানকে গতিময় করে তুলেছে। এর পেছনের ব্যবসায়িক রাজনীতির প্রকোপ ও কিন্তু অনেক বিশাল। যাই হোক ইতিহাস নিয়ে আমরা ত আলোচনা করবই। তবে তা আজকের পর্বে নয়।

বিদ্যুৎ এর প্রথম সরবরাহ হয় ডিসি কারেন্টের মাধ্যমে। তারপর স্যার নিকোলা টেসলা এই বিদ্যুৎ কে নিয়ে আসেন আজকের এই এসি কারেন্ট এর যুগে। ডিসি কারেন্ট এ সুবিধা ছিল এর দিকপরিবর্তী প্রবাহ নেই। তাই এর ব্যবহারে শক খাওয়ার মত তেমন কোন ঝুঁকি ও নেই। কিন্তু হেভি লোড নেওয়ার জন্য ডিসি কারেন্ট মোটেও কার্যকর না। যেটা এসি কারেন্ট আসার পর একেবারেই সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু এসি কারেন্ট এর দিকপরিবর্তন হওয়ায় এর ভোল্টেজের ও তারতম্য ঘটে থাকে। যার ফলে এসি কারেন্ট ব্যবহারে আমাদের সর্বদা ভালো মানের যন্ত্রপাতি ও পরিবাহী তারের সাথে সতর্কতা অবলম্বন করাও অত্যন্ত জরুরি। বিদ্যুৎ বা তড়িৎ নিয়ে পড়াশোনা হচ্ছে চার্জের খেলা। দুই রকম ই চার্জ থাকে। একটা নেগেটিভ আরেকটা পজিটিভ। এই চার্জদ্বয়ের আদান প্রদান ই শক্তি হিসেবে আমাদের বিদ্যুৎ প্রদান করে থাকে। শক্তির আমরা জানি রূপান্তরিত হয়ে থাকে। এর পরিমাণ সর্বদা ধ্রুবক। শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। তা কেবল আমরা রূপান্তর করি। যেমন আমরা খাবার গ্রহণ করে থাকি আমাদের কে উজ্জীবিত রাখার জন্য৷ যেন আমরা চলাফেরা করে কাজ কর্ম গুলো করতে পারি। তো আমাদের খাদ্য যতটুকু শরীরে যোগান দিতে পারি ততটাই আমরা তা দিয়ে কাজ করতে খরচ করতে পারি। আর বাকি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত হওয়ার পর আমাদের দেহে অপ্রয়োজনীয় অংশটুকু আমরা বর্জ্য হিসেবে প্রকৃতিতে ত্যাগ করি। এটা কিন্তু যেন তেন বর্জ্য। পুরো বিশুদ্ধ জৈবসার। আর যে জৈবসার থেকে মাটি ও বৃক্ষাদি শক্তি লাভ করে থাকে। এটাই যে শক্তি আমরা সৃষ্টি করতে পারছিনা আবার ধ্বংস ও করতে পারছিনা। কেবল প্রয়োজন অনুসারে রূপান্তর করছি, নিজেদের কাজে লাগাচ্ছি। আবার শক্তি নিজে থেকেই রূপান্তর হয়ে যাচ্ছে। এই সকল খেলা আরো ইন্টারেস্টিং ভাবে বোঝা যায় তাপশক্তি নিয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে। গতির সাথে তাপশক্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমরা পাই। কারণ যখন একটা বস্তু যেকোন গতিশীল অবস্থায় থাকবে এখন সেখানে তাপ শক্তির উৎপন্ন হবে। সেই জায়গাটা গরম হবে ঘর্ষণের কারণে। ঘর্ষণ জিনিসটা হচ্ছে আমরা যেখানে যেতে চাই তার বিরুদ্ধে যে বাধাটা আছে সেটাই হচ্ছে ঘর্ষণ। আর ঘর্ষণের কারণে সেখানে তাপ উৎপন্ন হবে। মানে গতি থেকে আমরা শক্তির রূপান্তরের একটা অংশ তাপ হিসেবে পাচ্ছি। সাইকেল যখন রাস্তা দিয়ে চলে। তখনও কিন্তু একই ঘটনা ঘটবে। উনি যখন সাইকেল চালানোর পরে সাইকেলটা রেখে টায়ারে হাত দিবেন তখন দেখবেন টায়ারটা গরম হয়ে যাবে। গতি রাস্তায় ঘর্ষণের সৃষ্টি করেছে। এর ফলে তাকে রাস্তার বিরুদ্ধে কাজ করে সামনে এগিয়ে আসতে হয়েছে। যার কারণে ওনার কাজের একটা অংশ তাপ বাই-প্রোডাক্ট হয়ে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

এবার কিশোর ভাই দোকানে ঢুকেই একটি গরম গরম চায়ের অর্ডার দিলেন। চা থেকে তখন ধোঁয়া বের হচ্ছিল। কিন্তু এর মধ্যে ওনার কাস্টমার ও চলে আসলেন। কাস্টমার চলে আসার পর কাস্টমারের সাথেই ওনার ব্যস্ত হয়ে যেতে হলো। চা এ যে চুমুক দিবেন এটাই তিনি সময় পাচ্ছিলেন না। তো এখন তো কাস্টমারকে আগে সার্ভিস দিতে হবে। এর মধ্যেই উনার আধা ঘন্টা সময় চলে গেল। আর তিনি চা এ চুমুক দিয়ে একটা বিদ্রুপ করে উঠলেন। চা যে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। এই যে চা টা ঠান্ডা হয়ে গেল সেটা কি কারণে ঠান্ডা হলো? এখানেও তাপ শক্তির খেলা। যখন একটা বস্তু গরম হবে তার কণা গুলো উত্তেজিত অবস্থায় থাকবে। মানে হলো ভেতরের কণাগুলো শক্তি লাভ করেছে। এখন এ শক্তি তো ওরা আর বহন করতে পারছে না। সেটাকে একটা যাওয়ার পথ করে দিতে হবে। নতুবা অধিক শক্তি নিয়ে কণাটিই তার পরিবারকে ছেড়ে বাইরে পথ দিবে। কেন তা পড়েছি রসায়নে। রসায়ন হচ্ছে গিয়ে প্রত্যেকটা পদার্থের গাঠনিক সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করে থাকে এবং তাদের মধ্যে যে ক্রিয়া কলা এবং আকর্ষণ শক্তি কাজ করে আমরা রসায়নে পেয়ে থাকি। মূলত রসায়ন হচ্ছে প্রত্যেকটা বস্তুর অভ্যন্তরীণ পদার্থবিজ্ঞান। এই হচ্ছে প্রকৃতির ধর্ম। যেখানে তাপ শক্তি লাভ করলেও তা ধরে রাখতে না পারলে সেটা আবার রূপান্তরিত হয়ে চলে যাবে। আর তাই চায়ের ক্ষেত্রে ও একই কাজ হয়েছিল। কারণ তাপশক্তির ধর্মই হচ্ছে উচ্চ তাপমাত্রার থেকে নিম্ন তাপমাত্রায় প্রবাহিত হওয়া। এটা হচ্ছে প্রকৃতির নিয়ম। আমরা শুধুমাত্র এটাকে গবেষণা করে নিজেদের বোঝার সাপেক্ষে জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি যাকে কাজে লাগিয়ে আমরা অনেক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের প্রসার ঘটিয়েছি।

আর এই এক উদাহরণের মাধ্যমেই আমরা পদার্থ বিজ্ঞানের প্রয়োগ গুলো সহজেই বুঝে ফেলতে পারবো এবং মনে রাখতে পারবো। এই টপিকগুলো শুধু শুরু ভেতরে আরও অনেক কিছু অনেক ভাবে জানার আছে।

আজ এই পর্যন্তই। কমেন্ট করে জানান আপনাদের ভাবনা। আর সাইলর একাডেমির এপে পেয়ে যান এসকল বিষয়ের ইজি-পিজি সমাধান।

Leave a Comment