এক কথায় পদার্থবিজ্ঞানঃ পদার্থবিজ্ঞান এস,এস,সি ও এইচ,এস,সি (পর্ব-২)

১ম পর্বের সূত্র ধরে আমরা এবার এগোই। কিশোর ভাই যে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন পথিমধ্যে তিনি অনেক বাধার সম্মুখীন তো হলেন। যার কারণে উনার সব সময় সমান বেগ বজায় রাখতে পারেননি। অর্থাৎ সময়ের সাথে উনি যে দূরত্বটা অতিক্রম করেছেন প্রত্যেক সেকেন্ডে আমরা হিসাব করলে পাবো তা সমান ছিল না। তাহলে তো বেগ পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তন বেগের ক্ষেত্রে দুই ভাগে ভাগ করে থাকি। সময়ের সাথে স্মরণের পরিবর্তন সমান হয় তাহলে সমবেগ। সমানভাবে না হয় তাহলে অসম বেগ। যখনই অসমবেগ হবে বুঝতে হবে বেগের পরিবর্তন হচ্ছে। বেগের পরিবর্তন মানে সরণের ও সময়ের সাথে পরিবর্তন হচ্ছে। সময়ের সাথে সেটা একই রকম হারে থাকছে না। আর এই অসম বেগের পরিবর্তনকে আমরা বলে থাকি ত্বরণ। বেগ যার খেলা হচ্ছে মূলত সময়ের সাথে কতটুকু আমরা দূরত্ব অতিক্রম করতে পারছি। সেটা যদি প্রত্যেক সেকেন্ডে সমানভাবে পরিবর্তিত হয় তাহলে সেখানে ত্বরণ থাকবে না। হার বলতে বোঝায় সময়ের সাথে পরিবর্তন বা একক সময়ের অনুপাত। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কিন্তু খুবই সহজ। এই ত্বরণ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে পরবর্তী টপিক ই ত্বরণের এর উপর নির্ভরশীল। মানে নিউটনের যে বলের ৩ টে সূত্র তা ত্বরণের সঙ্গায়ন ছাড়া আমরা এগুতেই পারব না। কারণ বলের ধারণাই আমাদের বোঝাবে সরণের মাহাত্ম্য কি? আর সময়ের সাথে সরণের সম্পর্ক।

কিশোর ভাই ত আসার সময় ওনার সাইকেলের প্যাডেল মেরেই সামনে এগুচ্ছেন৷ যদি ওনার পা দিয়ে উনি শক্তি প্রদান না করতেন তাহলে ত সাইকেল টা সামনে যেত না। সাইকেল টা স্থির দাড়িয়ে থাকত। তাহলে সাইকেলের সময়ের পরিবর্তন এ কোন সরণ ও হত না আর সরণ না হলে তো বেগ ও হবে না। এখন সাইকেলকে ত সামনে যেতেই হবে প্যাডেল দিয়ে নিয়ে যাই বা হাটিয়েই নিয়ে যাই। শক্তি ত দিতেই হবে। আর এই যে শক্তি দিয়ে সাইকেল টাকে গতিশীল করব এটাকেই বলা হয় বল। তাহলে সাইকেল ত স্থির ছিল তখন বেগশূণ্য আর যখন প্যাডেল মারা হলো তখন তা চলতে শুরু করল তাহলে তার অবস্থান থেকে সরে গিয়ে সে একটা সরণ বা দূরত্ব লাভ করতে লাগল। তাহলে তখন ও ত ঘড়ি চলমান। সময়ের সাথে যে তার সরণের একটা সৃষ্টি হলো সেটাই ত বেগ। আর এই বেগ ত কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। যা প্রথমে স্থির অবস্থা থেকে সাইকেলকে গতিশীল করেছে। অর্থাৎ শূণ্য বেগ থেকে একটা বেগ লাভ করেছে। এতে তাহলে সাইকেলের বেগের পরিবর্তন হলো। কীভাবে হলো? অইযে প্যাডেল দিয়ে শক্তি সঞ্চার করা হলো। এটাই হচ্ছে বল। যখন স্থির বস্তুকে আমরা তার জায়গা থেকে নাড়িয়ে গতিশীল করব আবার সেই গতিকে থামিয়ে কমিয়ে দিব বা একেবারে স্থির করে ফেলবো তাই হচ্ছে বল। আর এই বল ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়৷ আর বল প্রয়োগে যেহেতু বেগের পরিবর্তন হচ্ছে তাহলে ত্বরণকে আমাদের লাগবে বলের পরিমাণকে হিসাব করতে। আসলে এই বেগ, ত্বরণ উভয়েই আসলে সরণের ই খেলা। সরণ এর পরিবর্তন গুলোকে সহজভাবে প্রয়োগ করতেই এই বেগ ও ত্বরণের মত যৌগিক রাশিগুলোকে সঙ্গায়িত করা হয়েছে।

তাহলে বল আমরা পেয়ে গেলাম বুঝে গেলাম। যেহেতু প্রত্যেক বস্তুর ই একটা ভর আছে। তার মধ্যে জড়তাও আছে। প্রাণহীন বস্তুর তো আর নিজে থেকে শক্তি প্রয়োগ করে চলবার ক্ষমতা বা কাঠামো নেই। কিন্তু এক জায়গায় পড়ে থাকার পূর্ণ সামর্থ্য আছে। তাই একে সরাতে হলে আমাদের মত চলমান মানুষ বা মেশিনের প্রয়োগ লাগবে। আর শক্তি সঞ্চার করে স্থানান্তর করতে হবে যা দিয়ে সেও চলা শুরু করবে। এই শক্তি প্রয়োগ টাকেই আমরা বলি বল। বল দিলে সরণ হবে আর সরণ হলে হবে কাজ। আর কাজ করার জন্য যে সামর্থ্য তৈরি হলো তাই শক্তি।

তাহলে কিশোর ভাই যে প্যাডেল চেপে সাইকেলে বল দিচ্ছেন সে বল সাইকেলের চাকায় ঘূর্ণন গতি তৈরি করছে যা গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে সাইকেলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।বল প্রয়োগে সাইকেলে ত্বরণ তৈরি হলো আর সাথে সাইকেল পেল সরণ। এতেই সাইকেল কাজ করা শুরু করল।

এই যে উদাহরণ। এই এক উদাহরণে আমরা কিন্তু এখন পঞ্চম অধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। আমাদের ভেক্টর নবম-দশম শ্রেণির জন্য এটা একেবারে বেসিক। তবে এই বেসিক টাই আমাদের জন্য প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ বোঝার খাতিরে। এই বেসিক টাই বুঝতে পারলে আমাদের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পরবর্তী ক্যালকুলেশন গুলো বুঝতে সম্পূর্ণ দুধ-ভাত হয়ে যাবে।

আমরা এই উদাহরণের মাধ্যমে গতি, বল, কাজ ও শক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করলাম।

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের জন্য উদাহরণটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই নবম দশম শ্রেণীতে বুঝে না থাকতে পারে আবার ভুলেও যেতে পারে। উনারা যদি এই উদাহরণ টাকে মাথায় এটি গল্প আকারে সেট করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই ওই অধ্যায়গুলোর বিষয়ে নিজে নিজেই পড়ে বুঝতে পারবেন। আর বিশদ বিস্তারিত গাণিতিক সমাধান গুলো আমাদের প্লে-স্টোর এপে ত থাকবেই তার সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে ও থাকবে।

আমাদের সাইলর একাডেমি এপস এ একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় সকল তথ্য ও প্রশ্নোত্তর এই একটি প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে পেয়ে যাবে। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গী আমাদের সাইলর একাডেমি এপ্লিকেশন। সকলে তাই আজই নিজেকে আপ-টু-ডেট করে এগিয়ে রাখতে এপ্লিকেশন টি ইনস্টল করে ফেলুন। আর তারই সাথে নিজেদের যাচাই করে এগিয়ে যান সাফল্যের উদ্দেশ্যে।

এবার আমাদের কিশোর ভাইয়ের সাইকেলটিকে আরো কিছুদূর টেনে নিয়ে যাই। কিশোর ভাই একা কত সাইকেল চালাবেন। এবার ওনার ভাতিজার সাথে দেখা। ভাতিজা চমক ও সাইকেল নিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ অফিসে। কিশোর ভাই ভাবলো এই টাইমে গিয়ে ওনার ও কিছু কাজ করে আসবেন। দুই জনেই একই সময়ে একই পয়েন্ট থেকে বিদ্যুৎ অফিসের দিকে রওনা হলেন। ৩ কি.মি পথ ভাতিজা চমক ১০ মিনিটে পৌঁছে গেল। কিশোর ভাই সেখানে পৌঁছালেন ওনার ভাতিজার আরো ৫ মিনিট পরে। তো একই কাজ করলেন দুইজনই কিন্তু সময়ের ব্যবধান তাদের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে দিল। চমক আগে পৌঁছে কিশোর ভাইকে পেছনে ফেলে দিল। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় একেই বলে ক্ষমতা। এখানে ভাতিজা চমক সাইকেল চালানোর ক্ষমতায় জিতে গেল। অর্থাৎ একক সময়ে যতটুকু কাজ করতে পারে তাই হলো ক্ষমতা। আর তাই একই কাজ যে যত কম সময়ে করতে পারবে তার ক্ষমতা তত বেশি হবে।

আরো কিছু সঙ্গায়ন, রাশি ও উদাহরণ আমরা পাব বিস্তারিত যখন পড়ব। আরো কিছু শাখা, প্রশাখা ও অবস্থা সম্পর্কে আমরা জানব। এ পর্যন্ত আমরা পঞ্চম অধ্যায় পর্যন্ত সম্যক ধারণা পেয়ে গেলাম। গাণিতিক সম্পর্ক গুলোও আমরা ধাপে ধাপে একই উদাহরণে করে দেখাবো। এখন আমরা রাশিগুলোকে বাস্তবে প্রয়োগ করে চিনে নেই।

পরবর্তী যে অধ্যায় টা নিয়ে আমাদের যে আলোচনা তা বেশ মজার ও গুরুত্বপূর্ণ। যা ছাড়া এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ই অচল। আমাদের সৌরজগতের আসল রহস্য যে গণিতে লুকিয়ে, যে ধারণায় সম্মিলিতভাবে সবার সংযোগ। আর কেউ নয়। তা বলের ই বড়ভাই মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ। বলের গডফাদার। কারণ আমরা যে সকল বল প্রয়োগ করে থাকি ছোট ছোট সব গুলো বল এই গডফাদার মহাকর্ষ, অভিকর্ষের আন্ডারেই হয়ে থাকে। আর মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ এই দুই জনের মধ্যে কিন্তু কোন পার্থক্য নেই। মূলত মহাকর্ষ বল হচ্ছে পৃথিবীর সুপার পাওয়ার দেশগুলোর মত। সৌরজগতের বড় বড় সব গ্রহ নক্ষত্রগুলোর মধ্যকার যে আকর্ষণ বল একে অপরকে বেধে রেখেছে সেটাই হল মহাকর্ষ বল। আর পৃথিবীর সাথে আমরা যেভাবে যে বলের মাধ্যমে আষ্টে-পিষ্টে জড়িয়ে আছি সেটাকে নাম দেওয়া হয়েছে অভিকর্ষ বল। এই বলের ও সঙ্গায়ন ও গাণিতিক সম্পর্ক দিয়ে গেছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার আইজাক নিউটন। আর এখানেই আমরা ধারণা পাই। উপর থেকেই আমরা কেন নিচে পড়ে যাই৷ কেন আমাদের পাছা ভেঙে যায় নিচে মাটিতে পড়ে বৃষ্টির দিনে আছাড় খেয়ে। স্যারের মাথায় অবশ্য আপেল পড়েছিল। আর আপেল পড়েই স্যারের মাথা খুলে দিল। আমরা পেলাম ত্বরণের বড় ভাই অভিকর্ষজ ত্বরণকে। তবে গতিতে আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার গ্যালিলিও কে স্মরণ করতে আমি একেবারেই ভুলে গেছি। ক্ষমা করবেন আমাকে। স্যার গ্যালিলিও পিসার হেলানো টাওয়ার থেকে বস্তু না ফেললে পড়ন্ত বস্তুর ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র সম্পর্কে হয়তোবা জানতে আমাদের আরো কয়েক শতক লেগে যেতে পারত কিনা কে জানে। আমাদের জগতে মানে পৃথিবীর বুকে সরলরৈখিক পথে আমাদের যে বলের খেলা সেখানে যে ত্বরণের উল্লেখ আমরা পাই সেখানে শক্তি টা আমরা নিজেরা প্রয়োগ ও স্থানান্তর করে থাকি। আর উপরে উঠতে থাকলে কোন বস্তুর উপর পৃথিবী নিজেই বল প্রয়োগ করে টেনে নিচে নামিয়ে আনতে৷ যেটাকে বলা হয় অভিকর্ষজ বল৷ অনেকটা প্রবাদ বাক্য আছে যে সমাজে কিছু শ্রেণির মানুষ আছে যারা কারো উন্নতি দেখলেই চায় টেনে নিচে নামিয়ে আনতে অনেকটা এরকমটাই। কিন্তু পৃথিবীর মোটিভ টা মোটেও তাদের মত নয়৷ এখানে ভরের খেলা। ভর যার বেশি তার জোর টাও একটু বেশি অনেকটা বিগ ফাইটারদের মত।

পরবর্তী অংশ টানবো আমরা ৩য় পর্বে। এ পর্যন্ত জানতে থাকুন, অনুধাবন করুন আর অবশ্যই কমেন্টে আপনাদের মতামত জানান।

Leave a Comment