পদার্থবিজ্ঞান প্রস্তুতি, সাজেশন ও কিছু কথা এসএসসি,এইচএসসি,নবম-দশম (৯ম-১০ম) ও একাদশ-দ্বাদশ (১১-১২) শিক্ষার্থীদের জন্য 

পর্ব-১ 

পদার্থবিজ্ঞান এমন এক বিষয় যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চারপাশে যা দেখতে পাই,অনুভব করি সেই বিষয় গুলোর বাস্তবিক আচরণ,কার্যকলাপ নিয়ে গবেষণা।আর এই গবেষণালব্দ ফলাফল ই আজকের দিনের অত্যাধুনিক পৃথিবী। 

এবার চলে আসি সিলেবাসে।আমরা ধাপে ধাপে প্রত্যেকটা কৌশল সহজভাবে বুঝে নিব। 

সিলেবাসে এখন বইয়ের সবগুলো চ্যাপ্টার পরীক্ষার জন্য থাকে না। করোনার পর থেকে শর্ট সিলেবাস চলছে। আর এই শর্ট সিলেবাসে ৮ টা চ্যাপ্টার থাকে প্রত্যেক ব্যাচের জন্য।তবে এর মধ্যে কয়েকটা চ্যাপ্টার অদল-বদল থাকে।যেটা পরবর্তীতে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে সামঞ্জস্য করা হবে। মূলত ১ম অধ্যায় আমরা মনে করি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। তেমন কোন প্রশ্ন আসবে না। অই ১ টা ২ টা প্রশ্নোত্তর তাও যা নৈর্ব্যক্তিক এ আসবে, তা না হয় পরীক্ষার আগে প্রস্তুতি নিয়ে নিব হয়ে যাবে। আর এখানেই আমরা ছোট্ট একটা ভুল করে ফেলি অই ১ম অধ্যায়কে পাত্তা না দিয়ে। আমরা অনেকেই বুঝিনা পদার্থবিজ্ঞানের ফর্মূলা গুলো কি করে হলো। কীভাবে একটা রাশির সাথে আরেকটা রাশির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন হচ্ছে। রাশি গুলোর পরিচয়, তাদের মধ্যে সম্পর্ক এই বিষয়গুলোই পদার্থবিজ্ঞানে সূত্রসমূহের মূলভিত্তি। প্রথম অধ্যায়ই পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাকরণ। ব্যাকরণ পড়লে যেমন একটি ভাষার বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। তেমনি পদার্থ বিষয়ে প্রথম অধ্যায়ে ঠিকঠাক সকল ব্যাকরণ শিখে ফেললে পরের যাত্রা খুব সহজ হয়ে যায়। 

এবার ২য় অধ্যায় থেকে আমরা প্রত্যেকটা অধ্যায়ের সাথে বাকি অধ্যায়গুলোর সংযোগ ও সম্পর্ক খুঁজে পাবো। একটি উদাহরণের মাধ্যমেই এসএসসিতে ২য় অধ্যায় থেকে ৪র্থ অধ্যায় পর্যন্ত আর এইচএসসিতে ২য় থেকে ৬ষ্ঠ অধ্যায় পর্যন্ত আমরা সম্পর্ক স্থাপন করে ফেলতে পারব। আমরা এখন তার ছোট করে গল্পের মাধ্যমে এর একটি ঝলক দেখে নেই। 

২য় অধ্যায় শুরু হয় গতি দিয়ে যেখানে গতির শুরু দুইটি রাশির পরিচয়ে ভেক্টর ও স্কেলার। যেখানে আমরা কোন একটি রাশির মানের সাথে দিকের সম্পর্ক পাই। আর কোন রাশির জন্য মানের সাথে নির্দিষ্টভাবে দিকের উল্লেখ থাকলে কেবল সেটিই ভেক্টর রাশি।  

আমাদের পাড়ার কিশোর ভাই গ্রামের পাকা রাস্তা দিয়ে সাইকেলে করে প্রত্যেকদিন বাজারে যান। কিন্তু আজ সকাল থেকে রাস্তার পাশে ড্রেইনেজের কাজ শুরু হওয়ায় রাস্তা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। এই পথটিই বাজারে যাওয়ার সবচেয়ে কাছের পথ আর সম্মুখের পথ। ঘড়ি ধরে প্রত্যেকদিনই সঠিক সময়ে দোকান খুলে ফেলেন। এখন আর কি করা দোকানে তে পৌঁছতে হবেই। আজ তাই বিকল্প পথ দিয়ে কিশোর ভাইকে দোকানে যেতে হবে। উনিও তাই আর দেরি না করে পাশের আবাসিকের ভেতর দিয়ে পৌঁছে গেলেন দোকানে। কিন্তু আজকে তার অনেক অলিগলি ঘুরে দোকান পর্যন্ত আসতে সময় খরচ হলো প্রত্যেকদিনের তুলনায় ১৫ মিনিট বেশি। (দৃশ্যকল্প-১) 

আমরা যখনই কোন গন্তব্যে যেতে চাই সবসময় স্বল্প পথে যাত্রা করার চেষ্টা করি যেন আমাদের সময় ও শ্রম বেঁচে যায়। আর স্বল্প দূরত্ব হবে শুরুর পয়েন্ট থেকে শেষ পয়েন্ট এর মধ্যে সরলরৈখিক। কেননা দুই বিন্দুর মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব হল সরলরেখা। আর এটাই হচ্ছে সরণ। আর এক্ষেত্রে যাত্রাপথকে অসংখ্য পয়েন্টে ভাগ করে প্রত্যেকটি পয়েন্টে আমরা যদি কম্পাস ধরি তাহলে দিকের কোন পরিবর্তন ই পাওয়া যাবে না।আর এর বাইরে গন্তব্য যাওয়ার প্রত্যেকটি পথই হবে সরণের তুলনায় দীর্ঘ এবং একটি পয়েন্টে হলেও দিক পরিবর্তিত হবে। আর এই সকল পথ ই হবে দূরত্ব। তাই কোন দুই বিন্দুর মধ্যকার সরণ হবে সর্বদাই একটি আর দূরত্ব হতে পারে অসংখ্য। এজন্যই সরণ হলো ভেক্টর আর দূরত্ব হলো স্কেলার।   

আমাদের সকল রাশির ভিত্তি ভেক্টর রাশিগুলো দিয়েই পদার্থবিজ্ঞানকে সঙ্গায়িত ও সম্পর্ক করা হয়েছে। আমাদের ১ম অধ্যায়ে জানা ৭ টি মৌলিক রাশি। এর মধ্যে ১ম তিনটি রাশি দৈর্ঘ্য, ভর, সময় এর উপর ভিত্তি করেই ৯ম-১০ম শ্রেণিতে প্রথম চারটি অধ্যায় আর ১১শ-১২শ প্রথম আটটি অধ্যায় এর সকল রাশির সম্পর্ক পাওয়া যায়। ১ম অধ্যায়ে আমরা মাত্রা সম্পর্কে যারা জানি নি তারাই আমরা সূত্রগুলোকে বুঝতে কষ্ট হবে।এমন হতে পারে যে আমরা নাও বুঝতে পারি। কারণ আমরা সংকেতের মাধ্যমে যেভাবে সূত্র গুলোকে লিখি এগুলো যে রাশির সংকেত আমরা যদি তাদের না চিনতে পারি তাহলে রাশিগুলোর সম্পর্কই আমরা বুঝতে পারব না।  

ছোট করে ১ম অধ্যায়ের গুরুত্ব তো একটুখানি বুঝে ফেললাম। এবার যদি সরণ ধরে সামনে আগাই তাহলেই আমাদের পরিচয় হয়ে যাবে বেগ এর সাথে। খুবই সহজ বিষয় পূর্বের দৃশ্যকল্প ধরেই যদি আমরা দেখি তাহলে সরণ আর দূরত্ব দুটোই মূলত মৌলিক রাশি দৈর্ঘ্যকেই প্রতিনিধিত্ব করছে । যেখানে একটি দৈর্ঘ্যের দিক নির্দিষ্ট যা হচ্ছে সরণ। এখন এই দৈর্ঘ্য পাড়ি দিতে কিন্তু একটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। এখন আমরা আবার ১ম অধ্যায়েই ফিরে যাই তাহলে দেখবো এককের টপিকটি। যেখানে আমরা এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ব্যবহার শিখি। এখন আমরা কিশোর ভাইয়ের পথটাকে গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ করলে একেবারে পান্তাভাত হয়ে যাবে।  

কিশোর ভাই যদি সরণের পথে ২০০০ মিটার পথ পাড়ি দিয়ে দোকানে যেতে সময় লাগে ৬০০ সেকেন্ড (১০ মিনিট) । তাহলে ১ সেকেন্ডে কত মিটার পথ পাড়ি দিচ্ছে?  

প্রশ্নটা খুব চেনা চেনা লাগছে না। হ্যাঁ ছোটবেলায় করা আমাদের ঐকিক নিয়ম। তাহলে উত্তরটাও খুব সোজা একক সময়ে তার অতিক্রান্ত দূরত্ব হবে ২০০০/৬০০ মি./সে. = ৩.৩৩ মি./সে. । আর এটাই হচ্ছে বেগ। যেহেতু সরণ থেকে পেয়েছি তাই বেগ ও ভেক্টর রাশি। তাহলে বেগের সম্পর্ক আমরা পাই বেগ = সরণ/সময় । যাকে আমরা ইংরেজি সংকেত দিয়ে প্রকাশ করে থাকি এইভাবে s=v/t । মানে একক সময়ের জন্য আমরা অতিক্রান্ত দূরত্ব বের করে যে মান পাচ্ছি তাই বেগ। আর এই বেগ দিয়ে আমরা কোন বস্তুর গতি দ্রুত না স্থির তা নির্ণয় করতে পারি। মূলত এই ঐকিক নিয়মের মাধ্যমেই আমরা রাশির মধ্যে সম্পর্ক গুলো বের করে থাকি।  

এবার ছোট করে সংকেত নিয়ে একটু না বললেই নয়। সংকেত দিয়ে আমরা সূত্রগুলোকে একেবারে কোড ওয়ার্ডের মত করে ব্যবহার করতে পারি। মূলত রাশি গুলোর ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে সংকেত লিখা হয়। যদিও সরণের ইংরেজি নাম d দিয়ে শুরু হয় displacement। তবুও সরণের প্রচলিত সংকেত হচ্ছে s । এখন s না দিয়ে d দিলেও কি ভুল হবে ? মোটেও না । সংকেতে প্রচলিত বর্ণ ছাড়া অন্য বর্ণ ব্যবহার করাও ভুল নয়। আমাদের মূল সম্পর্কটা জানা প্রথম আবশ্যক। তারপর আমরা সম্পর্কের চরিত্রগুলোকে কোন বর্ণ দিয়ে প্রকাশ করব তা আমাদের একান্ত বিষয়। সেক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথাটি আমাদের অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে যে, আমরা যে বর্ণে প্রকাশ করতে চাচ্ছি রাশিটিকে তা আমাদের সাইড নোটে লিখে দিতে হবে যেন পর্যবেক্ষণকারী বুঝতে পারে সংকেতটি কোন রাশির প্রতিনিধিত্ব করছে। ব্যস এবার রাশিগুলোর সম্পর্কটিকে সঠিকভাবে প্রকাশ করে আপনার নির্ধারিত সংকেতগুলোকে ঠিকজায়গা মত বসিয়ে দিলেই আপনার কাঙ্খিত গাণিতিক সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।  

আমরা আজকের পর্বে গুটি কয়েক পা এগিয়ে চলে আসলাম। এই একটি উদাহরণেই আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের সিংহভাগ আমরা কভার করে ফেলবো। আমাদের লেখনির লক্ষ্যেই হচ্ছে সকলের জন্য সহজভাবে পদার্থবিজ্ঞানকে তুলে ধরা, যেন ছোট-বড় সকলেই, যেকোন বয়সের শিক্ষার্থী ও পাঠক এই বিজ্ঞানকে অনুধাবন করে বাস্তবজীবনে এই জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারে। তাই মূল ভিত্তি গুলোকে সঠিকভাবে চিনতে ও ধরতে পারলেই পথ সোজা হয়ে যায়। কারণ এই বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্মকান্ড ও আমাদের অস্তিত্ব অকল্পনীয়।  

সবাই কমেন্টে আপনাদের মতামত আলোচনা করবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার এর মাধ্যমে আমাদের লেখনিকে আরো উৎসাহিত করে বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরো প্রসারিত ও অনুপ্রানিত করতে ভুলবেন না যেন। কারণ বিজ্ঞান ও জীবন অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের সকল রহস্যই বিজ্ঞান। দেখা হচ্ছে পরবর্তী পর্বে।    

1 thought on “পদার্থবিজ্ঞান প্রস্তুতি, সাজেশন ও কিছু কথা এসএসসি,এইচএসসি,নবম-দশম (৯ম-১০ম) ও একাদশ-দ্বাদশ (১১-১২) শিক্ষার্থীদের জন্য ”

Leave a Comment