লাল পাহাড়ের পাদদেশেঃ শ্রীমঙ্গলের ভ্রমণকথা

এর মধ্যে আন্টি ও ছোট ভাই ও চলে আসলেন। আন্টিও তো এসে খুব হাঁপিয়ে গেছেন। কেননা রাস্তা থেকে অনেকদূর হেঁটে লাল পাহাড়ের গুড়া পর্যন্ত আসতে হয়। আর যে আগুন ফাটা রোদ। মাথা যেন তখনই ফুটিয়ে দিবে তাপে। এমন অবস্থায় আন্টিও বললেন না আর উপরে ওঠা সম্ভব নয়। তখন পায় ও আসলে আমাদের জোর অনেকটাই কমে গিয়েছিল। আর রোদের উত্তাপ তো আমাদেরকে উঠতে দিচ্ছিল না। বাতাসটাও তেমন ছিল না মোটামুটি বন্ধুই হয়ে গেছে প্রায়।এমন অবস্থায় উপরে যাওয়ার মত আসলেই আমরা আমরার কেউ সাহস পাচ্ছিলাম না। আমরা তখন সবাই মিলে বসে পড়লাম ওই কাজ তোলারই নিচে। আমি এর আগে গিয়েছি উপর পর্যন্ত। সেখানে মা কালীর একটি মন্দির আছে আমি দর্শন করে এসেছি। কিন্তু সেদিন আসলে কেউ না যাওয়াতে মায়ের দর্শনে গেলাম না। চা বাগানে কিন্তু ঠিকই উপরে ছিলেন কাজ করছিলেন তারা সেই সকাল থেকেই। ওই লাল পাহাড়ের উপরে উঠলে খুব সুন্দর আমাদের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। যা লেকের ভিউ থেকে অনেকটাই আলাদা। লেকের ভিউ একরকম কেননা সেখানে লেক আছে বুক চিরে একটি প্রাণবন্ত মুহূর্ত। ঝলমলে সূর্যের আলো জলে পড়ে চিকচিক করছে মুক্তোর মত। আর লাল পাহাড়ের উপরে দৃশ্য পুরোটাই সবুজ চাদরে লেপ্টে আছে প্রাণের শ্রীমঙ্গল। আমি আর শান্ত হাঁটতে লাগলাম সামনে। একটি সুন্দর ঝিরিপথ বয়ে গেছে। সূর্যের তাপে বেশ ভালোই ঝলমল লাগছিল। কিছুদূর গিয়ে আর আমরা পাহাড়ের দিকে উঠলাম না। আবার ব্যাক করে চলে আসলাম গাছের নিচেই। সেখানে আমরা প্রায় এক ঘন্টার মত বসলাম আড্ডা দিতে লাগলাম। আন্টির কিছু ছোটবেলার গল্প শুনলাম। তারপর আমরা দেরি করলাম না কেননা দুপুর তিনটায় শান্তদের আবার ট্রেন ছিল। সেখান থেকে আমরা বারোটার দিকে করে রওনা দিয়ে দিলাম বিজিবি ক্যাম্পের ঐদিকে। ওখানে বধ্যভূমি আছে যেটা ১৯৭১ সালে মানুষদেরকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী। অনেক গরম ছিল অনেক বুদ্ধভূমিতে গিয়ে আমরা সেখানে ক্যাফেট এরিয়াতে বসলাম। তারপর বিদ্যুৎও ছিল না যার কারণে আমরা ঠান্ডা পানির বোতল কিনলাম। সেখানে আধা ঘন্টার মত বসে রইলাম। আমাদের সাথে যে সিএনজি ড্রাইভার ছিলেন উনিও খুবই চঞ্চল এবং ব্লগ বানান শ্রীমঙ্গল সম্পর্কে। তিনি এদিক-সেদিক ঘুরতে লাগলেন যেন ঘুরতে তিনি এসেছেন আমরা এসেছি ওনাকে সঙ্গ দিতে। ভালো মতো কিছু ভিডিও ফুটেজ নিয়ে নিলেন তিনি প্রায় একটা নাগাদ আমরা রওনা দিলাম শহরের উদ্দেশ্যে।

মূলত আমরা যাইনি আমরা শহরে গিয়ে নেমে গেলাম। আন্টি বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে রাজিব চলে যেতে লাগলাম আবার আমাদের রাজীবদের নিজস্ব জায়গায়। এবার আমাদের সাথে চললেন আমাদের জসিম ভাই। জসিম ভাই হচ্ছে রাজীবের বড় ফুফাতো ভাই। কেননা ওড়না ওই রাজীবের জায়গায় যে অন্য কেউ এসে গ্রহণ করেছে জন্ম হয়েছিল গতরাতে। তো এখন তো দীর্ঘ দশ বছর পর এক যুগের মত তিনি আছেন সে বিষয়ে জসিম ভাইও গেলেন সাথে। কারণ রাজীবের প্ল্যান ছিল যে ওই জায়গায় যেহেতু উনি অনেকদিন ধরে আছেন তাহলে সেখান থেকে এডিট করে ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি উপস্থাপন বা প্রস্তাব করা হবে। যদিও সে সন্ধিহান ছিল যে কে জিজ্ঞেস না করে এই সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। তবুও প্রাথমিক একটি প্রস্তাব কি দিয়ে আসলো। কিন্তু যে জায়গাটা দখল করে রেখেছে সে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল যে সে পারবে না দিতে। তুই আসলে বলছে যে সে এখানে প্রায় এক বছরের কাছাকাছি হবে। কিন্তু তার সেটআপ দেখে মনে হচ্ছিল না মনে হচ্ছিল কম হলেও তিন থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে এখানে আস্তানা গেড়ে রয়েছে। তবে কিছু বলার ছিল না উনারা কেউই থাকেন না। তবে ১০ বছর আগে এই জায়গাটি পরিপূর্ণভাবে ফাঁকা ছিল। এই ১০ বছরের অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে দুই একটা ঘর উঠেছে। এখন এখানেও মানুষ থাকা শুরু করেছে। একেবারে পৌরসভার কাছেই। প্রায় এক কিলো হাঁটলেই ওইখান থেকে পৌরসভা দেওয়ালের এপার আর ওপার। সে তারপর শেষ মুহূর্তে বললো ঠিক আছে তাহলে আমরা এক বছরের একটা চুক্তি করতে পারি। এই কথা হয়েছে আমরা যেহেতু হাঁস পালন করব সেই বিষয়তে তার সাথে একটু আলোচনা করে ফেললাম। আলোচনায় ছিল যে আমরা এখানে কতগুলো হাঁস পালন করতে পারব। তিনি বললেন এখানে যে জায়গায় আছে ১০০০ হাঁস পালন করা যাবে। তবে হাঁস পালন করতে হলে হাসতে চড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা এই হাঁসগুলো একই জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে থাকে তাহলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সবকিছুর হিসেবে আমরা মাথায় মেলাতে লাগলাম। এরমধ্যে গাছ বেশ ভালই কিন্তু সেগুলোর বেড়ে উঠতে পারছে না এটা চোখে পরল রাজিবের। যেহেতু জসিম ভাইয়াকে এর কাছে জানতেন হোটেল ব্যবসা। ভোলার আগে থেকেই আইডিয়া আছে গাছ বিক্রি করার প্রসঙ্গে। তো রাজিব জসিম ভাইয়ের পরামর্শ নিলেন। জসিম ভাইকে দেখালো প্রায় পাঁচ থেকে ছয়টি গাছ যেগুলোকে বিক্রি করে না দিলেই নয় । এই গাছগুলোর অনেকগুলো খুবই লাগো অবস্থায় আর ভেতর থেকেই নষ্ট হয়ে যেতে লাগলো। ফেটে গেল কয়েকটা কাজ। যেহেতু কেউ এখানে এসে দেখার নেই তো রাজিব পাঁচ থেকে ছয়টি গাছ বিক্রি করে দেওয়াই যায়। সে ক্ষেত্রে সেই জসিম ভাইকে জিজ্ঞেস করল ভাই কাজগুলোর দাম কত হতে পারে। জসিম ভাই বললেন ১৩ থেকে ১৪ বা ১৫ হাজার টাকা। রাজিব তো হা হয়ে গেল তার এক্সপেকটেশন ছিল তিরিশ হাজার টাকা। রাজিব তবুও বলল আচ্ছা ঠিক আছে এখানে গাছের কাজ কেনে এমন কি আছে ওনাকে আসতে বলুন। জসিম ভাই পরিচিত একজন গাছ ব্যবসায়ীকে ফোন দিলেন। উনি বললেন আচ্ছা ঠিক আছে আমরা আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি। আধাঘন্টা আমরা ওর সাথে আলাপ আলোচনা এবং সিগারেট খেতে খেতেই কাটিয়ে দিলাম। আধা ঘন্টার মধ্যে গাছ ব্যাপারে চলে আসলো। উনি এসে কাজগুলোকে ইন্সপেকশন করলেন এবং গাছগুলো দেখে বাছাই করলেন। এবার দাম দর করার পালা। গ্রামে এই গাছটির গাছগুলোর দাম আসলো বারো হাজার টাকা। মূলত এই গাছগুলো ছিল হাইব্রিড কাজ এ কারণেই আসলে এই গুলোর দাম ৩০-৪০ হাজার হওয়া সম্ভব নয়। এমতাবস্তায় দর কষাকষি চলতে লাগলো। শেষমেষ ১৬ হাজার পর্যন্ত গেলেন। এটাই উনার শেষ দাম বলে উনি চলে যেতে লাগলেন। তখন আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলাম। এবং উনাকে গিয়ে শহরে দেখা করার জন্য মনস্থির করলাম আমরা। ওয়ার কাঠের দোকান আমরা গেলাম গিয়ে শেষমেষ ১৮০০০ টাকায় চুক্তি হলো। তাহলে আগামী কালকে গাছগুলো কেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হল।

গাছগুলো বায়না দিয়েই রাজিব উনার থেকে ১৮ হাজার টাকা নিয়ে নিলেন। রাজীব তো টাকা নিয়ে বেশ খুশি। এখানে এসে তার সাফল্য অর্জন হল। তখন দুপুর হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমরা লাঞ্চ করতে চলে গেলাম আবার রিজিকে। লাঞ্চ সেরে ভাইকে রসমালাই কিনে দিয়ে সাথে দই বিস্কিট ওনাকে পাঠিয়ে দেয়া হল বাড়ির উদ্দেশ্যে। আমরা কিছুক্ষণ শহরের মধ্যেই পাইজারি করতে লাগলাম। আর আমাদের আজকের কার্যকলাপের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম। জসিম ভাই একজন খুবই উদার মনের মানুষ। ওর সাথে অনেক ট্র‍্যাজেডি আছে লাইফে। উনি একটা ট্রাপ এর বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। উত্তরবঙ্গে উনি নাকি একটি চক্রের হাতে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার মত হারিয়ে ফেলেন। সেটি আবার আইনের সহায়তায় উদ্ধার করতে পেরেছিলেন তবে পুরোটা নয়। সে থেকে ওনার পরিবারেও মর্যাদা কমে যায়। তারপর থেকে উনি আলাদা দোকান করা শুরু করেন। সে থেকে উনার ভাগ্যর চাকা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। উনি যুবসমাজদের পালস বুঝেন। তাই ওনার দোকানে ভিড় লেগেই থাকে। উনার যে সকল আইটেম আছে ঠিক সেইম আইটেম উনার আম্মার দোকানে আছে। জসিম ভাই কিন্তু আমাদেরকে ওনাদের জায়গায় পালন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। বলেছে তোরা কর এখানে কোন টাকা পয়সা লাগবে না। কিন্তু সেই উদারতা আমরা রাজীবের ফুফুর মধ্যে দেখতে পাইনি। এ সকল বিষয়গুলো নিয়ে আমরা রেলস্টেশনে আলাপ করতে লাগলাম। আলাপ করছি আর হাঁটছি আর সিগারেট খাচ্ছি।

এর মধ্যেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে গেল। আমাদেরও বিদায় বেলা চলে আসছে ফিরে আসার বাড়িতে। আমরা মনে করলাম আগামীকালকেই দুপুরবেলা গাছগুলোর কাজ শেষ করে ট্রেনে চড়ে বসবো। সেই কথামতোই আমরা করলাম মনস্থির করে ফেললাম। সন্ধ্যাবেলা আমরা দেরী করলাম না আমরা চলে আসলাম রাবার বাগানে। সেখান থেকে লিচুরবাগান বেশ দূরেই আছে। রাবার বাগানের রাতের নীরবতা নির্জনতা কাটিয়ে আমরা প্রায় ৭ টা নাগাদ আবার অটোতে চড়ে বসলাম লিচুর বাগানের উদ্দেশ্যে। সেখানে আজকের রাতটা কাটাবো ভাইদের সাথে। টুকটাক আলোচনা চলল রাত পর্যন্ত। ফুফুর সাথে আলোচনা হলেও ফুফার সাথে আলোচনা হল। তারপর খাওয়া দাওয়া করে আমরা জসিম ভাইয়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। এখন যে মূল বিষয়টি ছিল সেটি হলো গিয়ে ওই জায়গার কি অবস্থান হবে। সেই গল্প কিন্তু এখনো বলাই হয়নি।

Leave a Comment