শ্রীমঙ্গলঃ এবারের যাত্রার শেষদিনে

আজকে উঠতে একটু দেরি হলো। কিন্তু রাতে বেশ ভালই ঘুম হয়েছিল। আজকে রাতেও ঘুমাতে হয়েছিল। আমাদের কিন্তু সকাল হতেই এতটা তীব্র গরম সকাল ৯ টা নাগাদ আমরা গরমে উঠে পড়লাম। সেদিন ভাবি আমাদের জন্য নাস্তা রেডি করে রেখেছিলেন। নয়টা উঠে আমরা ফ্রেশ হতে বাইরে চলে গেলাম। মুখ ধুয়ে এগিয়ে টয়লেট করে আবার ঘরে ফিরে আসলাম। বেশ উত্তাপ লাগছিল। আমার আবার টয়লেটে না গেলে সকালবেলা হয় না। তারপরে আমরা ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করতে বসলাম। নাস্তায় ডিম ভাজি মুরগির ঝোল বেশ ভালোই লাগল। গরমটা আমাদের নাস্তা করে আরো বেশি বেড়ে গেল। তখন ভাবলাম আমরা গোসল করে একবারে বেরোবো। গোসল করার জন্য আমরা প্রথমে ভাবলাম বাইরে গিয়ে পুকুরে করব। ওই বাইরে পুলিশের একটা কুয়া রয়েছে। কুয়াটা আমরা গিয়ে দেখলাম সেটা ভরাট হয়ে গেছে। গোসল করা হলো না। এখনতো গোসল করতেই হবে যেহেতু অনেক গরম। তাই ভাবী বলল যে ভিতরে মোটরের সাপ্লাই আছে সাপ্লাইয়ের পানি দিয়ে গোসল করতে পারব। ভালোই তাহলে রেজাল্টটা কারণ আমরা মোটরের পানিতে ঠান্ডা ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে পারব। চলে গেলাম ভেতরে আমরা গোসল করব। সেখানে একটি বেশ বড়সড়ো ঘর যেখানে একটি গরু বাধা রয়েছে। গোয়ালঘর বলা চলে। ওখানে করে সাপ্লাইয়ার লাইনটা দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা। গরুদেরকে গোসল করানো সবকিছুর কাজ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ওনারও এখানে গোসল করে থাকেন। কথা হল মটর ছাড়তেই ও যে কি ঠান্ডা পানি। এর মত ঠান্ডা পানি বেশ পরিস্কার ঝর্ণার পানি। একেবারে হৃদয় জুড়ে যাচ্ছিল পানির আবরণে। দ্রুত করতে সেখানে আমরা সাবান নিয়ে নিজেদের পরিষ্কার করে। বন্ধুকে দিয়ে বন্ধু আমাকে পানি ধরে সাহায্য করেছিল গোসল করতে। কয়েকটা সময় আমিও ধরে সাহায্য করেছি গোসল করতে।

আমরা গিয়ে গোসল করেছিলাম প্রায় সকালের শেষবেলায় কিন্তু এতটাই গরম ছিল তখন যে আমরা আমাদের কাপড় চোপড় শুকিয়ে শুকানোর আগেই একটু রোদে দিয়ে আবার পরে বেরিয়ে পড়লাম। সামনে ফুফুর দোকানে গিয়ে বসে এক কাপ চা খেলাম৷ রাজীবের ছোট খালাত ভাইয়ের সাথে গত রাতেই পরিকল্পনা হয়েছিল যে আমরা সকালে কিছু জায়গায় ঘুরব। উনিও অনেকদিন কোথাও গিয়ে ঘুরাঘুরি করতে পারেননি। আমরা সেই পরিকল্পনাতেই সকাল সকাল উনার বাইক নিয়ে বের হবো বলে কথা। ফুফুর দোকানে গিয়ে দেখলাম জসিম ভাইও সেখানে এসেছেন। দোকানেই বসে ছিলেন উনি। ফুফুর সাথে এ বারের মত বিদায় নিয়ে রাজীব বের হয়ে গেল। বের হতেই রাজীবের দুলাভাই ও এসে পৌছালো। জায়গার দখলের ব্যাপারে সবাই অবগত হয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয় রাজীব যে গাছ বিক্রির কাজটি করেছিল যেটা সে অনেকটাই গোপন রাখতে চেয়েছিল সেটাও জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। বিষয়টা হচ্ছে গাছ যার কাছে বিক্রি করা হয়েছিল৷ উনি গত রাতেই ফুফুর দোকানে এসেছিলেন এসে ব্যাপারটা ফুফুকে বললেন। ফুফু শুনে তা আর কিছু বলেন নি। এবার আসলো বের হওয়ার পালা। জসিম ভাইকে বাইরে নিয়ে রাজীব আজকের পরিকল্পনা সম্পর্কে খুলে বললো। সে বিষয়টি অবশ্য জানতে ও দেখতে পেরে ওনার ছোটভাইয়ের তেমন পছন্দ হয়নি। সে দূর থেকে বিষয়টি দেখছিল আর আমাকে জিজ্ঞেস করল কি আলাপ করছেন ওনারা৷ আগেই বলেছিলাম ভাইদের মধ্যে একটি স্নায়ুযুদ্ধ চলমান। সে খাতিরেই ওনারা সবাই আলাদা হয়ে গেছেন। আর ফুফুও জসিম ভাইকে কোন কিছু প্রদানে নারাজ। আর সেই জসিম ভাইয়ের সাথেই আমাদের একটা ব্যবসার পরিকল্পনা হচ্ছিল। রাজীব আবার সবকিছু আগে থেকেই বলে দেয়। ফুফুর কানেও হয়তোবা কথাটি চলে গিয়েছিল। ফুফু সেরকম ইঙ্গিত ই আমাদের দিয়েছিলেন। তাই আমরা বুঝে গিয়েছিলাম এই পথে আর পা বাড়ানো উচিত হবে না। আমরা তাই করলাম আর এই ব্যবসার ব্যাপারে কাউকে কিছু জানালাম না। বুঝে গিয়েছিলাম নিজেদের ইনভেস্টমেন্ট না থাকলে এই কাজ করা কখনই সম্ভব নয়। সকলেই আমাদেরকে শুধু ছোট করেই দেখবে।

আমরা তাই আমাদের সিদ্ধান্ত গতরাতে নিয়ে ফেলেছিলাম। জসিম ভাইয়ের সাথে কথা বলে। ঐদিকে আমরা রাজীবের ফুফাতো ভাই ছোটটার সাথে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। বোঝা যাচ্ছিল উনি একটু এ বিষয়ে মন খারাপ করেছেন। কে জিজ্ঞেস করছিল, কেন করছে, কেন করছে গাছ বিক্রি সে সবকিছু খুলে বললো। কিন্তু তিনি কোনভাবেই সেই বিষয়ে মনঃপুত হচ্ছিল না। যাই হোক উনি দুধ আনার জন্য যে এলাকায় যান সেই এলাকায় আমরা বাইকে গেলাম। ভাইয়ের সাথে দূরে কোথাও ঘুরতে গেলাম না। আমরা ওখান থেকে আমরা নাস্তা করার পর সিগারেট খাইনি। সিগারেট কিনে আমরা একটা ঠান্ডা কিনে সে একটা আম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে খাচ্ছিলাম। যেখানে আনতে গিয়েছিলাম সেখানে উনি দোকানদারকে বলে গিয়েছিলেন আমরা যাই খাই না কেন কোন বিল যেন না নে। আমরা সেখানে যখন খাচ্ছিলাম আর আলাপ করছিলাম তখনই কাছে একটা পাকা আম নিচে পড়লো। কথা ভাগ্য আছে আমাদের বলতে হবে। আমটা কুড়িয়ে নিয়ে পলিথিনের মধ্যে আমার ছোট ব্যাগটায় রেখে দিলাম। সেখানে আরেকটি আম পড়েছিল। গ্রামের গাছের আমে আঁশ অনেক বেশি থাকে। সে হিসেবে কেমন হবে আমটা না খেয়ে আসলে বোঝা যাচ্ছিল না। প্রায় ১৫ মিনিট পর ভাই দুধ নিয়ে চলে আসলেন। সেখান থেকে আমরা বাইকে করে আবার ফুপুর দোকানে ফিরে আসলাম। দুধগুলো দিয়ে এবার ভাই আমাদেরকে নিয়ে সামনে ইস্পাহানি টি স্টেটে গেলেন। পানি টুইসডেটে আমরা কিছুক্ষণ বসে কথা বললাম। বলার পর এবার আমাদের শহরের উদ্দেশ্যে যেতে হবে। আজকে গাছ কাটার লোক আসবে। বিষয়গুলো সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে আজকে দুপুর বেলা ট্রেন ধরে রওনা দিব বলে ঠিক করেছিলাম।

তাই আমরা আবার দেরী করলাম না। সেখান থেকে আমরা বাইকে করে আবার রাধানগর ফিরে আসলাম। রাধানগর ভাই একটা সিএনজিতে আমাদের তুলে দিল। আর বাইকে করে উনিও পথ দিলেন। দোকানের উদ্দেশ্যে আমরা সিএনজিতে উঠে গিয়ে এবার শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যেতে বেশি সময় লাগলো না। আধা ঘন্টার মধ্যে আমরা শ্রীমঙ্গল শহরে ঢুকে গেলাম। শহরে ভিড় ছিল ভালই। তখন প্রায় এগারোটা বাজে গেছে। আমরা তাই হালকা নাস্তা করে রাজীবদের সেই জায়গার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ফিরে যাব সকাল থেকেই গাছ কাটার লোক চলে এসেছে বলে রাজিব ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়েছিল। আমরা আরো তিনটে সিগারেট কিনে আবার শীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানার অইদিক রওনা হলাম। সেখানে গিয়ে আমরা মূল কাজ সেটার উদ্দেশ্য সাধন করতে লাগলাম। দেখলাম যে সেখানে গাছ রেডি কেটে লোকজন কাঁধে করে নিয়ে আসছিল। ওই জায়গা থেকে আর গাছ কাটার প্রায় তিন-চারটে মতো বাকি ছিল। ভিতরেই ঢুকে দেখলাম বেশ ভালোভাবেই গাছ কাটা হচ্ছিল। গাছগুলো রাজীব দেখিয়ে দিয়েছিল সেগুলোই তারা বেছে বেছে কাটছে। আর এরমধ্যে জায়গার ভাড়াটে লোকও চলে আসলো। তাকে তো আগের রাতে আমরা বলেছিলাম তাকে জায়গাটা ছাড়তে হবে। বলল, “ভাই তাহলে আমি যেখানে কচু লাগিয়েছি সে জায়গাটা একটু দেখে আসি চলেন।” সেই রোদের মধ্যেই জমির আইল ধরে তার ওই জায়গাটা দেখতে গেলাম। দেখলাম হ্যাঁ ঠিকই একটা জমিতে কচু লাগানো আছে। যে কচুগুলো এখনো বড় হয়নি সেগুলো বড় হতেও একটু ভালোই সময় লাগবে। তাই আর দেরি হলেও তাকে এই জায়গাটা ছাড়তেই হবে। কেননা আমরা বুঝতে পারছিলাম সে জায়গা থেকে সরে যেতে হতো। ১৫ দিনের মধ্যেই নিল সে ওই জায়গাতেই সরে যাবে। ওই জায়গায় বিদ্যুৎ নামানো ছিল না। তাকে বিদ্যুৎ অফিসের সাথে কথা বলে বিদ্যুৎ সে যেটা সময়ে চাইলো ১৫ দিনে তার কচু হয়ে গেলে তার জায়গা থেকে শান্ত করে আবার নিয়ে আসবে এখানে।

ওর কথাগুলো আমরা বুঝার চেষ্টা করলাম। তবুও ওকে রাজিব সতর্ক করে দিল ঈদের পরে আঙ্কেল-আন্টি আসলে ভালো হবে না। আমরা আবার ফিরে আসলাম। ফিরে এসে পাশে গাছ লাগানো ছিল সেখানে বসে দৃশ্যগুলো দেখতে লাগলাম। এর মধ্যে এসে আমাদের জন্য চা বানানোর প্রস্তাব দিয়ে গেলেন জায়গায় থাকা বিনা পয়সার ভাড়াটে। আচ্ছা ঠিক আছে বানান। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কতটায় ট্রেনে উঠবো। রাজিব বলতে লাগলো যে গাছ কাটাগুলো শেষ হলে তারপরে আমরা রওনা দেই। এর মধ্যে আমরা সিগারেট খেতে লাগলাম। আর আমার ব্যাগে যে দুটো আম পেয়েছিলাম সেটা আমরা তখন খেলাম। একটা আম ভালোই পোকা ছিল ভিতরে। আর যেটা ভেবেছিলাম অনেক আঁশ ছিল। আম গুলো ভালই মিষ্টি ছিল। তারপর আমরা আবার সিগারেট খেতে খেতে ভাবতে লাগলাম যে আমরা এখনই রওনা দিব কিনা। এর মধ্যে উনি চা ও করে নিয়ে আসলেন। সাথে পাউরুটি দিলেন আমাদের জন্য। খেয়ে আমরা আর অপেক্ষা করলাম না। গাছের টাকা তো গত কালকে নিয়ে ফেলা হয়েছিল। তাদের কাটার বাকি ছিল দুটোর মত। দেরি না করে সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে পড়বো সিদ্ধান্ত করলাম। প্রস্থান করে চলে আসলাম রেলওয়ে স্টেশনে। রেলওয়ে স্টেশনে এসে দেখলাম আমরা ট্রেন কয়টায় আছে। বেলা ১২ টার ট্রেন আমরা মিস করেছিলাম। তাই আমরা মাস্টারকে জিজ্ঞেস করলাম পরবর্তী ট্রেন কয়টায় আছে। তিনি আমাদের বললেন যে আমরা পরবর্তী ট্রেন দুপুর দুইটা চল্লিশে পাব। ঢাকায় যাবে তাই আমাদেরকে আখাউড়ার আগের স্টেশনে নামতে হবে। এর মধ্যে আমাদের সময়টাও তো কাটাতে হবে। আমরা রাবার বাগানে চলে গেলাম। সেখানে আমরা দীর্ঘ সময় পার করলাম না। যে কথা সেই কাজ দুইটা চল্লিস পর্যন্ত আমরা রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসলাম। আর অপেক্ষা করলাম। প্রায় ঠিক টাইমে ট্রেন চলে আসলো এবং আমরা ট্রেনে উঠে পড়লাম। আর সেই যাত্রা টার আগে রেলওয়ে স্টেশন থেকে আমরা লেবু কিনে ফেললাম আর সাথে আনারস। শ্রীমঙ্গলের আনারস বেশি মিষ্টি হয়। সেখানে খুব কম দামে পাওয়া যায়। বাসায় যেহেতু আসছি তা নেওয়ার জন্য ভুল করলাম না। আমরা ট্রেনে উঠে একটি সিট পেয়ে গেলাম। বসে আমরা ঠিক আরাম করে আগে আমাদের স্টেশন এ নামলাম। স্টেশনের নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। এখন এখানে এসে আমরা দাঁড়ালাম সেখান থেকে আমরা অটো নিয়ে কসবা। কসবা থেকে আমাদের এলাকার বাস চলে। বাস এসেছে জেগে উঠলাম বন্ধু কি ইউসুফপুর নামিয়ে দিলাম আর আমি সিএনজিতে কোম্পানীগঞ্জ ফিরে আসলাম। এই ছিল আমাদের শ্রীমঙ্গল সফর এবং ব্যবসায়িক যে পরিকল্পনা। সেটা হবে যেটা আমরা পরবর্তীতে ফান্ডিং নিয়ে করবো বলে পরিকল্পনা করেছি। এখনো চলছে সেগুলো।

1 thought on “শ্রীমঙ্গলঃ এবারের যাত্রার শেষদিনে”

Leave a Comment