
তো আমরা কিন্তু দুপুরবেলা বিদায় দিয়ে শান্তদেরকে হাটাহাটি করছিলাম। তারপর তো জসিম ভাই আসলো ওনাকে গিয়ে জায়গার ব্যাপারে কথা বললাম। তারপর খাওয়া দাওয়া করে যখন ভাইকে পাঠিয়ে দিলাম। আমরা তখন হেটে হেঁটে চা বাগানের দিকে ছিলাম। সেখানে রাজীব দার বাবাকে ফোন দিল। সে জানত তার বাবা খুবই রাগ করবে। ঠিক তাই হল রাজিবের বাবা রাজিবের উপর প্রেস রাগ করলেও যখন শুনতে পেলেন ওই জায়গায় কেউ অবস্থান করছে। উনি তখন স্রেফ ওই জায়গা থেকে সরে যেতে বললেন। রাজিব তখন বুঝতে পারছিল ঘটনাটি। সে ডিড করার বিষয়টি আঙ্কেলকে জানালে আঙ্কেল সরাসরি নিষেধ করে দেন। রাজিব তখন আর কোন কথা বাড়ালো না। সে সিদ্ধান্ত নিলও সন্ধ্যা বেলা গিয়েই ওকে খুলে বলবে। ঐ লোককে অই স্থান থেকে সরে যেতে বলবে। আঙ্কেলকে অনেক বুঝাতে ছিল আঙ্কেল বুঝতে চাইলেন না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে সন্ধ্যার পরে কি ওনাকে জানিয়ে দিব। কত অনুযায়ী আমরা আবার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম লিচুর বাগান। এই আবার ঝুম বৃষ্টি শুরু হল বিকালের দিকে । আমরা তড়িঘড়ি করে ফুফুর বাসায় ঢুকে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থেমে গেল। আমরা আবার জসিম ভাইয়ের দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। জসিম ভাইয়ের দোকানে যেতেই উনি আমাদেরকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। জসিম ভাইয়ের দোকানে বসে রাজি সবকিছু জানালো বলেছেন। জসিম ভাইও আঙ্কেলের কথায় দ্বিমত পোষণ করলেন না। তখন বৃষ্টি প্রায় থেমে গিয়েছিল। আমরা আবার ফুপুর দোকানে এসে বসলাম। সেখান থেকে ছোট ফুফাতো ভাইয়ের বাইকটি নিয়ে আমরা ফুফুর ভাইয়ের সাথে করতে চলে গেলাম। সেখানে রাজীবের ফুফাতো বোনও ছিল। আপুর সাথে দেখা হলো না উনি বাজারে গিয়েছিলেন। তখন আকাশে অনেক মেঘ ছিল। তবে ওনাদের বাসা অত্যন্ত সুন্দর ছিল। পাহাড়ের কোন কিসে পাদদেশে অনেকগুলো সারি সারি ঘর। সরকার থেকে ওনাদের জন্য করে দিয়েছিল। সেই ঘরেই ওনারা থাকতে সুযোগ পেয়েছেন। আমাদের সাথে ভাতিজা ও এসেছিল। ভাতিজাকে নিয়ে আমরা আর দেরি করলাম না আবার বাইক নিয়ে ফিরে গেলাম। ফ্রি গিয়ে বাইকটি বুঝিয়ে দিল ছোট ভাইকে। তখন প্রায় মাগরিব হয়ে যাবে এরকম সময়। আমরা জসিম ভাই থেকে পরামর্শ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। একটি অটো নিয়ে আমরা শহরে ঢুকে গেলাম। আমরা আর দেরি করলাম না সরাসরি জায়গায় চলে গেলাম। সেখানে যেতেই দখলকৃত লোকটির সাথে দেখা হয়ে গেল। রাজিব তৎক্ষণাৎ ওনাকে আঙ্কেলের বিষয়টি জানিয়ে দিল। কিন্তু লোকটি সেখান থেকে শুরুতে অনীহা প্রকাশ করছিল। রাজিব বুঝতে পেরেছিল আঙ্কেলের সাথে কথা বলিয়ে দিলে হয়ে যাবে। তবে বিষয়টা খারাপ হবে লোকটির জন্য । কিন্তু লোকটিকে তো বোঝাতে হবে। তাই আর কোন উপায়ান্তু না পেয়ে আংকেলের সাথে কথা বলতে দেওয়া হলো। সে খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিল প্রথমে কথা বলার সময়। কিন্তু আঙ্কেল এমন ভাবে উনাকে দিয়ে ধরলেন উনি একেবারে থমকে গেলেন। উনি যেন বলার জন্য কোন কথাই খুঁজে পাচ্ছি না। একেবারে পরাজিত সৈনিকের মত সার রাজীবকে বোঝানোর জন্য অনুরোধ করতে লাগলো। রাজিব চেষ্টা করল বোঝাতে কিন্তু বুঝিয়ে দিল যে ওর বোঝানোতেও কোন ফায়দা হবে না। দারোগার কথা জায়গা দারোগাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তো মনে হয় ওকে খুব গালমন্দ করেছিল। ও তখন একটু ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করল। শুরুতে বলেছিল যে ছয় মাসের মধ্যে সে এগুলো সরাবে। কিন্তু আঙ্কেল ওকে শুধু একদিনের সময় দিয়েছিল। সে তখন ওই এলাকার মেম্বারকে ফোন দিল। মেম্বার আংকেলের পূর্ব পরিচিত। মেম্বারকে ফোন দিয়েছে বলতে লাগলো যে গালমন্দ করেছে ওকে এখান থেকে চলে যেতে বলেছে। ও জায়গাটা দেখে রেখেছে । সে এত কম সময় কি করে যাবে। কিন্তু মেম্বার জানিয়ে দিল ওকে জায়গাটা ছেড়ে দিতে। এবার রাজিবের খেলার পালা। রাজীবকে সে আকুতি মিনতি করতে লাগলো। কমে এক মাস সময় তো ওকে দিতেই হবে। তা না হলে সে পুরো ঘর সরাতে পারবে না। সেও কিন্তু চাইছিল জায়গাটা দখল করে চাষবাস করার। কারণ সে জায়গার দাম নিয়ে খেলেছে প্রথমে। তারপর অনেক ওর জায়গা আছে বলে ভাব নিয়েছে । বুঝাতে চেয়েছে সে এই এলাকার প্রভাবশালী। কারণ লোকজন ষড়যন্ত্র করছিল ওর পেছনে। ওর আড়াইশো মুরগি নাকি বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে। আর এখন অনেক কোটি কোটি টাকার জায়গা নাকি আছে। এত কিছু বলার পরও আংকেলের টেতানি খেয়ে সে ১৫ দিনের সময় বলেছে কথা দিল। তার একটি কচুর ক্ষেত লাগিয়েছে এখানে শেষ স্থানান্তর করবে আবার এই ফার্মটিকে। এখন কচুগুলো বড় হয়নি তাই ওনার লস হয়ে যাবে। রাজিব উনাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো। কিন্তু জায়গা ছাড়া তো ওনার দায়িত্ব কর্তব্য। রাজীব আশ্বাস দিল সে আঙ্কেলকে বোঝাবে। এই বলে আমরা শুনে বেরিয়ে পড়লাম শহরের দিকে।
শহরে ঢুকে আমরা নাস্তা করার জন্য চলে গেলাম মোরে। আমার কিছু ভাষা পড়া খেতে ইচ্ছে করছিল। রাজিব তখন ক্ষুধার্ত ছিল। আমরা গিয়ে একটি দোকানে ঢুকলাম। সেখানে গরম গরম আলুর চপ ছিল। আমরা ঢুকতে দেখি তিনিও এসেছেন দোকানে। আমরা আলুর চপ খেলাম আমাদের বিল দিয়ে চলে গেলেন। এবার হাঁটতে হাঁটতে একটি রাস্তার পাশে দোকানে দেখলাম পেয়াজু ভাজ ছিল। আমি পেয়াজু খাওয়ার জন্যই খুব আগ্রহী ছিলাম। পেঁয়াজু নিয়ে আমরা বসে বসে খেতে লাগলাম। পেঁয়াজু খাওয়া শেষ করে আমরা এবার বাজারটা ঘুরে দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হাঁটছি অলিগুলি সকল সেক্টর দিয়ে। হাঁটতে হাঁটতে রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসলাম। সেখানে একটি পরিচিত দোকান ছিল রাজীবের। সেখানে দোকানদারের পরিচয় জানতে চেয়ে স্মৃতিচারণ করতে লাগলো সে। রাজীবের তখন কাছের বীজ কেনার পরিকল্পনা মাথায় আসলো। সেখানে একটি দোকান আছে গাছের বীজ নিয়ে গিয়েছিল। তার পরিকল্পনা ছাদে খালি জায়গায় শাকসবজির চাষ করবে। সেখান থেকে জিজ্ঞেস করে নামের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। একটি লম্বা গুলি ফেলে আমরা বীজের দোকানের আরতের কাছে চলে আসলাম। নিজের দোকানে আসতে সে বিভিন্ন বীজের ব্যাপারে সে জানতে শুরু করলো। দোকানেও তাকে স্পষ্টভাবে বলে দিল কোন বীজের কোন কাজ হবে। আমি বারণ করলাম ওকে বীজ কিনতে এরকম বীজ আমাদের এলাকাতেই পাওয়া যায় কেননা সব জায়গায় প্যাকেট যত বীজ ই ছিল। এবার আমরা আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে ঘটি গরম চানাচুরের ঠেলা দেখতে পেলাম। চানাচুর খাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলাম বন্ধুকে। বন্ধু আগ্রহী ছিল চানাচুর খেতে। চানাচুর খেতে খেতে আমরা রাবার বাগানে বললাম। আমরা আবারও সেদিনের মতো রাবার বাগানে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে সিগারেট খেতে খেতে আলাপ-আলোচনা করতে লাগলাম। আগামীকালকে আমরা বেরোবো বলে প্রেম করে ফেলেছিলাম। আর আঙ্কেল যে ওর কথা মানবে না সেটাও আমরা আলোচনা করছিলাম। ওকে যত দ্রুত সম্ভব জায়গা ছাড়তে হবে সেটা আমরা বুঝেছি। ওর ছোলা কলা গুলো বুঝতে পেরেছি আমরা। এবার তাই আর আমরা দেরি করলাম না বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ফুফুর। রাতে ভাবি আমাদের জন্য রান্না বান্না করে রেখেছিল। আমরা গিয়েই খেতে বসে পড়লাম। তখন প্রায় রাত দশটা বেজে গেছে। সেদিন রাতের মত আমরা একটু বাইরে গিয়ে বসলাম। ওইদিনই আমাকে পায়ে জোক ধরেছিল। আমি তো প্রথমে বুঝতে পারিনি। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যখন বাইরে সিগারেট খেতে গেলাম। তখন ডান পায়ের আঙ্গুলের চিপায় চুলকাচ্ছিল। হাত দিতেই নরম কি যেন লেগে উঠলো। আর সেই লাগানোতেই বুঝলাম যে এখানে তো একটা জোক। ভাগ্যক্রমে আমার হাতটা গিয়েছিল। তা না হলে অনেক রক্তই সে চুষে ফেলত। যদিও জোক আসলে উপকারী প্রাণী। আমরা একে যতটাই ভিলেন বানাই না কেন। যুগ কিন্তু আমাদের দেহের ক্ষতিকর রক্ত-নিকা গুলোকে চুষে ফেলে। সেটা গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে। জোক কামড় দেওয়ার পর তার ছোটাতে অনেক রক্তক্ষরণ হয়। আমারও তখন হচ্ছিল। বেশ রক্তই বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঘন্টাখানেক পর তা থেমে গেল। বেশ ঠান্ডা ও লাগছিল তখন। হিমেল হাওয়া বয়ে চলেছে চারপাশে। নির্জনতার মাঝে কেবল বোন প্রকার আওয়াজ কানে আসছে। আমরা আর দেরি করলাম না ঘরে ফিরে গেলাম। ঘুম দেওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেলাম। সকালে অনেক তাপ পড়বে তা আমরা আগে থেকেই মনস্থির করেছিলাম। তাই আর দেরি না করে ঘুমিয়ে পড়লাম। প্রায় একটা বাজে রাত তখন। ভাইকে বলে দিল রাজিব সকাল ৯ টার আগে যেন কেউ বিরক্ত না করে। ঘুমাতে ঘুমাতে আমরা আজকে এবং আগামীকালকের বিষয় নিয়ে আলাপ করতে লাগলাম। আগামীকালকে আমরা যে রওনা দিব সেটা একেবারেই কনফার্ম ছিল। আমরা পরিকল্পনা করতে করতে এও ভাবতে লাগলাম যে আমরা শ্রীমঙ্গল আর আপাতত কিছু করতে পারছি না। জসিম ভাইয়ের প্রস্তাব ও ভালো ছিল কিন্তু ফুফু কখনোই তা মেনে নিতেন না। সেটা আমরা ফুফুর কথার ধরনের বুঝে ফেলেছিলাম। সকল আলাপ আলোচনা করতে করতেই আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। এবার সকাল হবার পালা।