শ্রীমঙ্গলের গল্পকথাঃ ব্যবসার জায়গা পরিদর্শন

রেলওয়ে স্টেশনে এসে আমি আর রাজীব সিগারেট খেতে খেতে ভাবতে লাগলাম কিভাবে কি করা যায়। বন্ধু তো বলেছে সকাল সকাল বেরোতে হবে চলে যাব রাজীবদের জায়গা দেখতে। আন্টিকে মোটেও আগে থেকে বলা যাবে না। শান্ত বারণ করে দিয়েছিল। আকাশের অবস্থা তখন মেঘ চলে এসেছে। ভালোই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। আমরা আর দেরি করলাম না রেলওয়ে স্টেশন থেকেই একটি অটো নিয়ে ফেললাম। অটো নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম রাজীবদের ফুফুদের বাসার উদ্দেশ্যে। সেখানেই আমাদের রাজিবের বড় ফুফাতো ভাইয়ের সাথে আলাপ হওয়ার কথা ব্যবসার ব্যাপারে। অটো চলছে চলছে ভালোই কিন্তু গ্র্যান্ড সুলতানের ঠিক কাছাকাছি আসার পরেই অটো হঠাৎ করে পিকআপ ছেড়ে দিচ্ছিল। চার্জ ছিল ব্যাটারীতে কিন্তু তবুও টানতে কষ্ট হচ্ছিল অটোর। শহর থেকে কিন্তু ভালই দূরে আবার অটো টাকে ব্যাক করতে হবে। আমরা অটোটা কে রাখলাম না বিদায় দিয়ে দিলাম। ভাবলাম যে হেঁটে হেঁটেই চলে যাব কারণ গ্র্যান্ড সুলতান এর পরেই লিচুর বাগানে হচ্ছে রাজীবের ফুফুদের বাসা। কিন্তু কিছুক্ষণ হাঁটতে হাঁটতেই আমরা পড়ে গেলাম ফ্যাসাদে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। কিছুদূর পর্যন্ত যাওয়া পর্যন্ত বৃষ্টি হালকা পাতলা ছিল। কিন্তু গ্র্যান্ড সুলতান পার হতেই বৃষ্টির তীব্রতা আরও বেড়ে গেল। এবার তো আমাদের কোথাও গিয়ে ঠাঁই নিতেই হবে আশ্রয় না নিলে তো ভিজে একেবারেই শেষ হয়ে যাব। তাই আমরা আসলে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু তোর সামনে গিয়ে হাতের ডানে একটি মার্কেট দেখতে পেলাম। আমাদের মত এই আরো দুই বান্দা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। দাঁড়াতে লাগলাম আর সিগারেট খেতে লাগলাম। সিগারেট প্রায় ফুরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি থামার নাম নিচ্ছে না। কিন্তু আমাদের তো যেতে হবে তাড়াতাড়ি হোক। কারণ আমরা বিশ্রামও নিতে হবে ঘুমাতে হবে সকালে উঠতে হবে। আর শ্রীমঙ্গল তো বৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ আগে থেকেই বিখ্যাত। দীর্ঘ দেড় ঘন্টার মত বৃষ্টির পর মেঘ একটু সময় দিলো আমাদের তাড়াতাড়ি পৌঁছনোর। আমরা এত দেরি করলাম না। বন্ধুরা জিত কিন্তু আবহাওয়া খুব ভালো করেই রপ্ত করে নিয়েছে। ওকে একজন আবহাওয়াবিদ বললে কম হবে না। ওর দারুণ জ্ঞান আবহাওয়া সম্পর্কে। সে ঠিক থেকে ১০ মিনিট সময় নিল যে বৃষ্টি আসবে আবারো। আর এর মধ্যেই আমাদের বাড়ি পৌঁছতে হবে। বাড়ি বলতে সেখানে ফুফু এবং ফুফাতো ভাইদের আগে থেকে দোকান আছে দোকান পর্যন্ত গেলেই আমরা নিরাপদ স্থানে চলে গেলাম। মোটামুটি তাড়াতাড়ি পায়ে হেঁটে আমরা ছুটতে লাগলাম। আকাশে ভালই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বললাম বজ্রপাত হবে না তো। আমি আবার বজ্রপাতকে খুব বেশ বড্ড ভয় পাই। কেননা দেশে এখন বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগই বলা চলে। বহু মানুষ বজ্রপাতের আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছে। বন্ধু আশ্বাস দিল কিছুই হবে না কারণ মেঘ সেরকম নয়। তবুও তোর সয়না কখন বজ্রপাত এসে আঘাত হানে তার কোন ইয়ত্তা নেই। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পা চালিয়ে ফুফুর দোকানে পৌঁছে গেলাম। অনেকটাই ভিজে গিয়েছিলাম না করে শুকোতে দিয়ে দিলাম চেয়ার এই। রাজিবের ছোট ফুফাতো ভাই আমাদের দেখে একটি ছোকরা কে দিয়ে আমাদের জন্য গরম গরম দু কাপ চা পাঠিয়ে দিল। চা খাচ্ছি আর বৃষ্টি উপভোগ করছি। বেশ ভালোই ঠান্ডা লাগছিল আবহাওয়াটা। বৃষ্টি বিলাসের জন্য খুব ভালো একটি জায়গা হচ্ছে শ্রীমঙ্গল। আবহাওয়া দেখার মত পরিবেশটাও। ভালোই ঠান্ডা লাগা শুরু করল মাথাটা ভালো করে মুছতে পারিনি তখন। চা খেতে খেতে আরও ১৫ মিনিট পার হয়ে গেল। বৃষ্টি তখনও কমার নামই নিচ্ছে না। প্রায় আরও ৩০ মিনিট পর বৃষ্টি খানিকটা কমলো। এবার আর চান্স নেওয়া যাবে না এখনই বেরোতে হবে। ডিরেক্ট চলে গেলাম ভাইয়ের বাসায়। টিন দেওয়া অস্থায়ী বাড়ির মত কেননা ওই জায়গাটি তাদের লিজ নেওয়া জায়গা। যে কোন সময় মালিকপক্ষ চলে যেতে বলতে পারেন। তাই ওনারা সেখানে আর স্থায়ী বাড়ি করেননি। সকলের জায়গার কিনে রাধানগরের দিকে বাড়ি করেছেন। বেশ ভালো বুদ্ধি তাদের। আর তেমন কিছু খেলাম না। রাত তখন প্রায় একটা বাজবে। এবার আর শরীর কি ছিল না তাই ঘুমিয়ে পড়লাম। বেশ ঠান্ডা বাতাস লাগছে সকালে যে কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হবে আমার এই বাংলাদেশের প্রথম অভিজ্ঞতা। দেশ আর আমি ঘুম কাটলো। তবে বড় সমস্যা ছিল যে নেটওয়ার্ক কাজ করছিল না। অগত্যা এভাবেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল ৬ঃ০০ টা বাজে ঘুম ভেঙে গেল আমার। বন্ধু রাজিব কে তাড়া দিলাম ঘুম থেকে ওঠার জন্য। কারণ ওদিকে শান্ত কে কথা দিয়ে রেখেছি সকাল সকাল আমরা চলে আসব। তাহলে তো তাড়াতাড়ি উঠতেই হবে। রাজিব উঠতে একটু ঘরে বসে পড়ছিল। ফোন নিয়ে প্রস্রাব করার জন্য বাইরে যেতেই নেটওয়ার্ক এসেছে এবং ফোনের পর ফোন আসছে। ফোনটা রিসিভ করলাম শান্তর। সে খুবই ডিপ্রেসড হয়ে গিয়েছিল যে কি ব্যাপার। বললাম নেটওয়ার্ক নেই তো বন্ধু কি আর করব। সকালের আবহাওয়াটা বেশ শীতল ছিল। শান্তকে আবার ফোন দিয়ে বললাম তাহলে তোমরা খাওয়া দাওয়া করে ফেল। আমরা আসতেসি। হালকা ফ্রেশ হয়ে আমরাও রেডি হয়ে গেলাম। ঘর থেকে বের হতেই বন্ধুর ফোন। ওনারা খাওয়া দাওয়া করেছেন আমাদের এখানেই আসছেন। তাহলে ত বেশ। রাজীব ওনাদের গ্র‍্যান্ড সুলতানের সামনে আসতে বলল। আমরা হাঁটতে হাঁটতে পথ দিলাম। লিচুর বাগান থেকে ৫ মিনিটের পথ মাত্র। হাঁটতে হাঁটতে আমরা গেট পর্যন্ত চলে আসলাম। এর মধ্যে শান্ত চলে আসলো। আমরা তারপর একটা অটো ঠিক করে লেকের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অসাধারণ একটি সৌন্দর্য লেকের। চা বাগানের মাঝখান দিয়ে দিয়ে পানি গিয়েছে প্রত্যেকটি এলাকায়। আন্টিরে কিন্তু আসার সময় আমাদের জন্য তেহারি নিয়ে এসেছিল। আমি আর রাজীব লেকপাড়ে বসে তেহেরি খেলাম। ঠান্ডা পানির মধ্যে পা ডুবিয়ে পা নাড়তে নাড়তে খেতে ভালই লাগছিল। কয়েকটা কুকুর ঘুরঘুর করছিল। খানিকটা তেহারী রেখে আমরা ফেলে দিলাম বক্সগুলো তাদের উদ্দেশ্যে। এবার লেকের পাশ দিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠা শুরু করলাম। উপরের থেকে কি মনোরম সৌন্দর্য! দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় আটটা বেজে গেল সকাল আর রোদে তখন খুব চড়া উঠে গেল। উপরের থেকে সৌন্দর্য দেখে আর দেরি করলাম না বেরিয়ে পড়লাম আমরা শীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে। সেখানে যাওয়ার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে শান্তকে রাজিবের জায়গাটা দেখানো। একটা অটো নিয়ে আমরা দেরী করলাম না চলে গেলাম। সেখানে আন্টিকে নামিয়ে দিয়ে টিকেট কাটিয়ে ছোট ভাই সহ পাঠিয়ে দিলাম ভেতরে।আমরা কিছুদূর হাঁটার পথ বেয়ে পৌঁছে গেলাম। সেখানে রাজীব ও আসছে প্রায় একযুগ পর।

সে ও ঠিক চিনতে পারছিল না। তবে সে জানে। কিন্তু নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছিলো। আর তাই সে রাস্তায় ধান কুড়ার কাজ করছিল এমন কয়েকজন ভাই ছিল ওনাদের তাদের জায়গাটা নির্দেশ করে দেখিয়ে বললো৷ অই জায়গাটার রাস্তা কোনদিকে। লোকটা তখন জিজ্ঞেস করল কোথা থেকে এসেছেন৷ রাজীব বললো ওটা ওদের জায়গা। তখন লোকটি বলল কুমিল্লা থেকে এসেছেন তাহলে। আপনার বাবা দারোগা। রাজিব বলল হ্যাঁ আমার বাবা দারোগা। জায়গাটা আমাদের না বলল হ্যাঁ আপনাদের তো অনেক দিন ধরে খুঁজছি। আপনারা কেউ নেই বলে এখানে মানুষ দখল করে ফেলবে তাই আমি এখানে পাহারা দিয়ে রাখছি। তারপর উনি আমাদের পথ দেখিয়ে জায়গা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন জায়গাটা কিন্তু রাস্তা থেকে বেশি দূরে না কিন্তু যেখানে জায়গাটা রাখা হয়েছে সেখানে যে রাস্তা আছে সেটি বন্ধ করে দিয়েছেন আরেক মালিক। কেননা তিনি একজন রিয়েলসটেড বিজনেসম্যান। আর রাস্তা হয়ে গেলে ওনার তাই দাম কমানোর জন্য পাশের ওই জায়গার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। গিয়ে দেখলাম সেখানে খুব সুন্দর করে গুছানো হয়েছে। উনি সেখানে একটি মুরগির ফার্ম দিয়েছেন একটি হাঁসের ফার্ম দিয়েছেন। সেখানে জায়গা হচ্ছে প্রায় ৩২ শতক। রাজীবদের মধ্যে ২৬ শতক আর বাকি ৬ শতকর খালাদের। আমরা ভিতরে যেতে উনি আমাদের আপন করার জন্য চেয়ার নিয়ে আসলেন বসতে। সেটার থেকে সতর্ক খুব ভালো লাগলো যদিও আমরা এরকমই সেটআপ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছিলাম। বাড়ির জায়গার চারপাশ চতুর্দিকে বড় বড় গাছ আন্টি আগেই লাগিয়ে গিয়েছিলেন এবং সেগুলো বড় হয়ে খুব ভালো একটা বেড়া তৈরি করেছে। বেশ ১৫ একটি বাগান বাড়ির আবহাওয়া। ওর খালাদের আট শতক জায়গায় একটা ছোট পুকুরের মতো আছে যেখানে হচ্ছে পানি দিয়ে দেওয়া হয় মোটর লাগানো হয়েছে। সেখানে হাঁসগুলো গিয়ে জলকেলি খেলে। যদিও রাজিবের কারণ হুট করে এখানে বসে আসা। মূলত বাবা-মা মানবেনা সে সেটা ভালো করেই জানে। তবুও সেদিনের মত সবকিছু দেখে আমরা বেরিয়ে পড়লাম আবারও। এবার যাওয়ার পর আমাদের লাল পাহাড় আমরা লাল পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তুই কি রোদ আকাশে। প্রচন্ড হিটে তাপদাহে পুড়ছিল পুরো শ্রীমঙ্গল। আমরা লাল পাহাড়ের গোড়া পর্যন্ত যাওয়ার পরে আর কেউ যাওয়ার সাহস করতে পারল না। রাজিব তোকে একটি গাছের নিচে বসে পড়ল। আমি রাজীব শান্ত সামনের দিকে ছিলাম আর আন্টি ছোটবেল ছিল অনেক পেছনে। মূলত গরম আর সকাল বেলায় পাহাড় আমরা পায়ে হাঁটা হয়ে গিয়েছিল অনেক।

Leave a Comment