হার্নিয়া অপারেশনঃ অপারেশনের পরেরদিন

মামার পায়চারি তখনো চলছেই। উনি যেন উঠে বসে পড়তে চাইছেন। ভল্টারিন যখন ফজরের পরপর দেওয়া হলো মামাকে। তখন থেকে অবশ্য উনার ব্যথাটা একটু কমা শুরু করেছিল। এর আগে যে পরিমাণ ব্যথা ছিল সহ্য করতে পারছিলাম না। এবার প্রবলেম হলো প্রস্রাবের। আমার প্রস্রাব আসার বেক আসছে কিন্তু প্রস্রাব করতে পারছেন না। এত ভীষণ মুশকিল ব্যাপার। কিন্তু কোন তো একটা উপায় বের করতে হবে। উনি ভাবছিলেন প্রস্রাব করলেই উনি ঠিক হয়ে যাবেন। কিন্তু কোন ভাবেই উনাকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। উনার সালেও তখন খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কি করা উপায় ছিল না। আমি তো খুবই রেগে যাচ্ছিলাম মামার উপর। আপনি একটু সহ্য করেন করতেই হবে। অপারেশনের রাতে তো একটু কষ্ট হবেই। আমার রাগের ভয়ে মামা একটু চুপসে গেলেন। আমাকে বললেন বাবা তুই ঘুমা। কিন্তু আমি তো নাছোড়বান্দা তো নিয়েছি আমাকে দেখতেই হবে কি হচ্ছে না হচ্ছে। আমি কিন্তু সর্বক্ষণই সজাগ ছিলাম। মামা কিছুতেই যেন কোন কিছুতে উল্টাপাল্টা করে না ফেলেন সেটার খেয়াল রাখছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম প্রচন্ড ব্যথা করছেন। তো কি করা উনাকে তো তা সহ্য করতেই হবে। এভাবে করতে করতেই ভোর পেরিয়ে সকাল হয়ে গেল। মামার শালা একটু খাটে এসে ঘুমোনোর জন্য এবার চেষ্টা করলেন। ছোট্ট একটি খাটে মামা ভাগিনা দুজনেই ঘুমানোর হালকা চেষ্টা করে ফেললাম। সকাল হয়ে গিয়েছিল তখন প্রায় ছয়টা। এই মুহূর্তে তো ঘুমাতে ঘুম চোখে চলেই আসবে। অনেকটা বাতাসও ছিল আর মশার কথা তো না বললেই নয়। আমি অবশ্য রাত দশটায় কয়েল নিয়ে এসে ধরিয়ে দিয়েছিলাম। তবুও যেন মশার অত্যাচার থাম ছিলই না। অগত্যা তালা খুলেই পর্দা লাগিয়ে ঘুমোনোর জন্য চেষ্টা। অবশ্য বেশিক্ষণ চেষ্টা করতে হলো না কিছুক্ষণ পরেই চোখ যেন না আপনি বন্ধ হয়ে গেল।

আর ভোরের থেকেই গরমটা আরো বেড়ে গেল। মনে হচ্ছিল বৃষ্টি হবে কিন্তু সেই বৃষ্টির দেখার পেলাম না। অগত্যা সে অবস্থাতেই আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার ঘুম ভাঙলো প্রায় নয়টা নাগাদ। ঘুম ভাঙলো খালাদের আগমনের সাথে সাথে। সাথে মামিও এসেছিলেন। মামা তখন অনেকটাই সুস্থ মনে হচ্ছিল। সত্য বলতে ব্যাথা তো আছে কিন্তু গত রাতের মত তিনি তখন এতটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন না। গতরাতে মামা যে বিভীষীকে দেখিয়েছিলেন। সেটা পরিবারের অন্য কেউ দেখলে কেমন ভাবে নিতেন সেটা আমার জানা নেই। যাই হোক মামাকে একটু ভালো দেখে আমার ভালই লাগলো। তারপর খালাদের সাথে কথা বলতে লাগলাম। মামার সালেও ততক্ষণে উঠে বাইরে গিয়েছে নাস্তা করতে। মামা বলছেন গত রাতের গল্প খালাদের সাথে। আর আমার ব্যাপারে যত নালিশ করছেন। আমি নাকি মামাকে অনেকটাই জোরে ধমক দিয়ে ফেলেছিলাম। কিছুই করার ছিল না ডাক্তার এবং নার্সকে আমি যে পরিমাণ পেইন দিয়েছি রাতের বেলায়। উনি তো ঘুম আনিনি সাথে আমাদের কাউকে আর ঘুমাতে দেন নেই। কিন্তু কোন রকমের অভিযোগ কেউ কিন্তু আসলে মামাকে করেননি। কেননা আমরা জানি এই অসুস্থ রোগীর কি পরিমাণ যন্ত্রণা হতে পারে। মামার বেশ ভালো রকমের অবশ্যই কাটতে হয়েছিল। ক্রি কাটার বেদনা আমরা বুঝতে পারি কতটুকু গভীর হতে পারে। এর মধ্যে বন্ধু শান্ত বাসা থেকে চলে আসলো হাসপাতালে। তার ডিউটি শুরু হয় সকাল ৯:০০ টায়। এসেই আমাকে সকাল সকাল ফোন দিল তার ফার্মেসিতে যেতে। তখন ফুল প্যান্টটা পড়ে নিচে নেমে গেলাম। যে বন্ধুর সাথে দেখা হল ফার্মেসিতে গিয়ে বসলাম। তখনো তেমন রোগীর এবং ডাক্তারের আনাগোনা শুরু হয়নি। বন্ধুর সাথে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিতে লাগলাম। বন্ধু কফি এবং বিস্কুট এনে আমাকে সাদর করলো। আমি গল্প করতে করতেই সকল নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতে লাগলাম। তখন সেকশন হয় সবসময় হাসপাতালে সব জায়গায় ঠিক রকম চলছে কিনা। তো আমাকে বন্ধু রিকোয়েস্ট করলো যে একটু উঠে বের হতে কারণ দেখেন যে বাইরের কেউ আছে তাহলে অভিযোগ দিতে পারে। আমি বুঝতে পারলাম বিষয়টা এবং বেরিয়ে পড়লাম। গিয়ে মামার কেবিনে গিয়ে দেখলাম অবস্থা কি। বন্ধুকে বললাম যে উপরে আসতে মামাকে দেখে যেতে। বন্ধু দুপুরের দিকে আসবো। আমি গিয়ে মামার পাশে বসলাম। তখনো সকাল ১০টা বাজে। আমার একখানা স্কুলে চাকুরীর ও তো আছেন তো উনাকে তো প্রস্থান করতেই হবে। উপরে গিয়ে দেখলাম খালারা মোটামুটি রেডি হয়ে যাচ্ছেন চলে যাওয়ার জন্য। আসলে কেউ থাকার আর কোন প্রয়োজনই ছিল না তখন। মামাকে তখনও সেদিন হাসপাতালেই অবস্থান করতে হবে। ডাক্তার আসলে বিকালে চারটায় এসে উনার অবস্থা দেখবেন পর্যালোচনা করে বলবেন যে কবে রিলিজ দেওয়া যেতে পারে। মামিও এসেছিলেন তোমারও বাসায় গিয়ে রান্নাবান্না করতে হবে। তাই আর কাউকে কষ্ট করে হাসপাতালে থাকতে দিলাম না। সকলকে বললাম প্রস্থান করতে। আমাকে মামার বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হল। কিন্তু আমি না গিয়ে মামারশ শালাকে পাঠালাম দুপুরের জন্য খাবার নিয়ে আসতে। সকালবেলায় মামা হালকা-পাতলা খাবার খেতে পেয়েছিলেন। ডাক্তার বলেছিলেন যে যাউ বস নরম জাতীয় খাবার খেতে। মামার আবার চা সিগারেট খাওয়ার একটা অভ্যাস তো আছেই আগে থেকে। কিন্তু কি আর করা অপারেশনের পরে তো সেগুলো গ্রহণ করা সম্ভব নয়। সিগারেট খেতে না পেরে মামার অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু চা খাওয়াতে কোন বারণ ছিল না। তো নিচে গিয়ে আমি মামার জন্য গরম চা নিয়ে আসলাম আর বিস্কুট নিয়ে আসলাম। তখন প্রায় সকাল ১১ টা বাজে। এসে মামার সাথে গল্প করতে লাগলাম। মামার শালাকে পাঠিয়ে দিলাম বাসায় খাবার আনার জন্য। কারণ মামা দুপুর থেকেই শক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। মামার অবস্থাটা তখন বোঝার চেষ্টা করছিলাম। যে পাইপ লাইনটার ট্রেনের সিস্টেম করে দিয়েছিল অপারেশনের জায়গা থেকে থেকে রক্ত তখনো জমা হচ্ছিল। মামাকে বললাম বেশি নড়াচড়া না করতে। কিন্তু উনি আসলে বেশি নড়াচড়া করছিলেনই।

মামার সাথে বেশ ভালই একটা গল্প জমে উঠল আমার। সুস্থ হওয়ার পরে উনি কি করবেন সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করতে লাগলাম। মূলত দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকতে মামা তেমন কোন ভারী কাজ করতেই পারছিলেন না। উনি কোন রকম চাকরিতেও যোগদান করতে পারেননি তখন। কিছুই করার ছিল না আসলে সবসময় অনুকূলে থাকেনা। মামার ক্ষেত্রেও তাই আমি মেনে নিলাম। পুরাতন অনেক স্মৃতিচারণ আমরা করতে লাগলাম। এর মধ্যেই দুপুর একটা বেজে গেল। বন্ধু শান্ত আমাকে ফোন দিলে আবার ফার্মেসিতে যেতে। নিচে গিয়ে ঘুরে আসলাম ফার্মেসিতে আবারো। তখন বেশ কম রোগীর চাপটা। বন্ধুরা তখন ডিউটি টাইম প্রায় শেষের দিকে। মানে লাঞ্চ ব্রিকের জন্য শেষের দিকে। বন্ধু আমাকে লাঞ্চ করার জন্য আহ্বান জানালো। আমি যদিও প্রথমে ডিনাই করলাম যে বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসবে। কিন্তু বন্ধু তো একেবারে ছাড়তেই চাচ্ছিল না। যাইহোক আমি বন্ধু প্রস্তাবকে আর ফিরিয়ে দিলাম না। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে আমরা যখন লাঞ্চে যাব তখন ডাক দিও। আমি আবার কেবিনে ফিরে গেলাম মামার কাছে। মামার সাথে আবারো গল্প করতে লাগলাম। এর মধ্যে মামার শালো চলে আসলেন দুপুরের খাবার নিয়ে। আর আম্মারও লাঞ্চের সময় হয়ে গেল তখন প্রায় দুপুর ২ টা বাজে। আমি বেরিয়ে পড়লাম লাঞ্চ করার উদ্দেশ্যে। অনেকক্ষণ ধরে অবশ্য সিগারেট খাওয়া হয়নি তাই নিচে নেমেই একটি সিগারেট ধরিয়ে ফেললাম। তারপর বন্ধু আমাকে পাশেই একটা ভালো হোটেলে নিয়ে গেল যেখানে সে লাঞ্চ করে থাকে। আমরা আমাদের কলেজ লাইফের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করতে লাগলাম। সামনে কি ব্যবসা করা যায় সে বিষয়ে আমরা আমাদের মত প্রকাশ করতে লাগলাম। হোটেলের আইটেমগুলো আমরা দেখতে গেলাম সেখানে কিছু ভর্তা, মাছ, মুরগি এ সকল আইটেমই ছিল। আমি মাছ খাওয়াটা কি প্রেফার করি। আর ছোট মাছ এখন হোটেল ছাড়া আসলে খাওয়াও পড়ে না। তাই আমি ভর্তা ভাজিত থাকবেই তার সাথে ছোট মাছের অর্ডার দিলাম। আর বন্ধু অর্ডার করলো কলিজার তরকারি। আসলে কুমিল্লার রান্না সবসময়ই খুবই ভালো। কোন অভিযোগ রাখার কোন জায়গা থাকে না। তারা প্রেমের বেলাতেও আমাদের কোন কার পূর্ণ নেই। বন্ধুর সাথে শ্রীমঙ্গলের ব্যাপারে আবার আলাপ করতে লাগলাম। শ্রীমঙ্গল বন্ধুর খুবই পছন্দ হয়েছে। সেখানে নির্জন পরিবেশে সে একটি জায়গা নিয়ে থাকার ইচ্ছা আবারও পোষন করলো। আমি এ ব্যাপারে ওকে সাহায্য করবো বলে আবারও নির্ভয় দিলাম। ছোট মাছটা বেশ ভালই হয়েছিল। বেগুন ভর্তা, লাল শাক, আলু ভর্তা এগুলো দিয়ে ভাত খেলাম। সাথে ছিল ডাল। এবার তো মিষ্টিমুখ করাটা অনিবার্য। আমার আবার খাওয়ার পর দই খেতে খুবই ভালো লাগে। কারণ তুই আমাদের হজম শক্তিকে বাড়িয়ে দে। বন্ধু দুই খেলনা কিন্তু আমি একটা দই খেলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে বন্ধু আমাকে কিছুতেই বিল দিতে দিচ্ছিল না। আমি বললাম মামা না হয় রাগ করবে। বলল তুই আমার অতিথি পরে দিস। বেরিয়ে পড়লাম একটা সিগারেট ধরালাম। বন্ধু তো কোন বাসায় গিয়ে বিশ্রাম করবে তাই ওকে ছেড়ে দিলাম।

Leave a Comment