হার্নিয়া অপারেশনঃ মামার হাসপাতালে শেষ দিন

আমি কিছুক্ষন বাইরে পায়চারি করে মামার জন্য এক কাপ চা নিয়ে উপরে উঠলাম। এসে দেখি মামার ও খাওয়া হয়ে গেছে প্রায়। ওনার শালা আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু আমি তো লাঞ্চ করে ফেলেছিলাম। এই কারণে আমি খাবারটা বিকালের জন্য রেখে দিলাম। মামা জিজ্ঞেস করলেন কি কি খেলাম। সব কিছু বললাম না মামাকে। উনি খাওয়া-দাওয়া করে ওষুধ খেলেন। ওষুধ খাওয়ার পর উনাকে বিশ্রাম নিতে বললাম। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলেন। এর মধ্যেই প্রায় বিকাল চারটা নাগাদ ডাক্তার সাহেব চলে আসলেন। আমার তখন একটু চোখ লেগে এসেছিল। চারটার কাছাকাছি দরজায় নক শুনলাম। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি ডাক্তার সাহেব আরো দুজন সহকারি সহ রোগীদের দেখতে এসেছেন। মামার কাছে গিয়ে ওনার কন্ডিশন সম্পর্কে জানতে চাইলাম। রাতে ব্যথা হয়েছে তখন অনেক সেগুলো বললাম। মামা ওনার প্রবলেম গুলো খুলে বললেন। ডাক্তার সাহেব বললেন সমস্যা নেই। প্রথম রাতে এরকম একটু হয়। ঠিক হয়ে যাবে। প্রস্রাবের সমস্যা সম্পর্কে বললেন। ডাক্তার বললেন সমস্যা নেই। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে তিনি চলে গেলেন পরবর্তী কেবিনে। আর ঠিকমতো ওষুধপত্র দেওয়ার জন্য নার্সকে বলে গেলেন। মামা তখন অনেকটা আশ্বস্ত হলেন।

ডাক্তার সাহেব বললেন যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে আগামীকাল উনাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হবে। মামা এবার চা টা খেতে লাগলেন। সকালবেলার বিস্কিট ছিল বিস্কিত দুটো মুখে দিলাম। মামার শালা বিশ্রাম করছিল তখন। মামাকেও দুটো কিস্কিট দিলাম। আমরা আবার গল্প করতে লাগলাম। আমাকে একটু বিশ্রাম নিতে বলে আমি আবার নিচে নেমে গেলাম। এর মধ্যে বন্ধু শান্ত বাসা থেকে চলে এসেছে। তখন বাজে প্রায় বিকাল পাঁচটা। নিচে নেমে একটু পায়চারি করে একটি সিগারেট খেলাম। খেয়ে দেয়ে আবার বন্ধু শান্তর আড্ডা দেওয়ার জন্য ফার্মেসিতে চলে আসলাম। ফার্মেসিতে এসে কিছুক্ষণ বসে আড্ডা দিয়ে আবার কেবিনে চলে গেলাম। দেখলাম মামা অনেকটাই সুস্থ তখন। তারপর এর মধ্যেই আমার ছোট খালা চলে আসলো। ছোট খালা বাসা থেকে নুডুল চাওমিন বানিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তখন চাওমিন খেলাম। বেশ ভালই লাগছিল কিন্তু তখন খেতে। খালা আবার সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে আবার চলে গেলেন এবং আমাকে বাসায় যাওয়ার জন্য বললেন। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে যাবো। তারপরেই মামাকে নিয়ে এবার আর কোন কাজ নেই। মামার শালাকে পাঠিয়ে দিলাম রাতের খাবার আনার জন্য। মামা ভাগিনা খুব আড্ডা দিতে লাগলাম। আড্ডা দিতে দিতে কখন যে রাত নয়টা বেজে গেল টেরি পেলাম না। এর মধ্যে বন্ধু শান্ত চলে আসলো। শান্ত এসে আমাদেরকে নাস্তা করার জন্য আহ্বান জানালো। আমি নিচে গেলাম তার সাথে একটু চা বিস্কিট খেয়ে আসলাম। বন্ধুর ডিউটি তখন প্রায় শেষ। নয়টার দিক কাছে আসলে বাসার দিকে চলে যায়। সেদিন আবার ওর এক ফুফাতো ভাইয়ের ছোট মেয়ে খুব অসুস্থ ছিল। সেটাই আর কোন সময় দিতে পারছিল না। আমি আর ওকে দেরি করলাম না। সেদিনের মতো শান্ত চলে গেল বাসায়। এর মধ্যে মামার শালাও চলে আসলেন খাবার নিয়ে। আমরা সবাই উপরে গিয়ে খেতে বসলাম। মামা তখন গতকালের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ। তখন আর দেরি না করে আমরা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ফেললাম। রাত তখন দশটা আমি ঐদিনও গোসল করিনি। আমার টার্গেটই ছিল সেদিন পর্যন্ত থেকে মামাকে একবারে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়বো। এ কাজ করতে আমাকে যতই কষ্ট করতে হোক না কেন করতেই হবে। আমি কষ্ট করে থেকেই গেলাম আর মামু গোসল হয়নি গত দুইদিন ধরে। সম্ভব না যেহেতু উনি অপারেশনের রোগী, উনার তো পানি লাগানো নিষেধ। তাই আমিও মামার সাথেই থেকে গেলাম দুদিনের জন্য দেরি করবো না বলে। রাতে ভাবছিলাম কখন শেষ হবে এই যাত্রা। তারপরে ফিরবো আর দেরি হলো না সে বিষয়ে। ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। মামা গতকালকে ঘুমাতেই পারেননি। সকাল পর্যন্ত সজাগই ছিলেন। আর আজকে তিনিও একটু ঘুম ঘুম ভাব লাগছিল। তাড়াতাড়ি মামা ঘুমিয়ে পড়ল। বেশ পাচারী করতে করতে রাত তিনটার মত বাজবে। আমার ঘুম ভাঙলো ভেবে দেখি মামা ঘুমাচ্ছেন। তখন আর মামার শালা সহ আমরা দুজনে গুটি মেরে শুয়ে আছি। এভাবেই আমাদের রাত পার হয়ে গেল সকাল হয়ে আসলো। সকালে আবার আমাদের খালারে দেখা করতে আসলেন। আজকে মোটামুটি আমরা শিওর ছিলাম যে মামা পেয়ে যাবেন ডিসচার্জ। ডাক্তার সাহেব চারটা নাগাদ আসবেন। তিনি এসে রোগীর কন্ডিশন বুঝে ছাড় দিয়ে দিবেন। আর কিছুক্ষণ সময়ই আমাদের হাসপাতালে অবস্থান করতে হতো। খালারা সকাল সকালে চলে গেলেন। আমি যদি নিতে লাগলাম বন্ধুকে আগের রাতে ফোন দিয়ে বলেছিলাম। সে যেন একটু তাড়াতাড়ি আসে। আজকে সকালবেলা ডিউটি ছিল না। বন্ধু বলল যে সে আমাদেরকে বিদায় দিতে অবশ্যই আসবে। বন্ধু ছাড়া সেখানে বিলপত্র করাটা খুবই কঠিন হয়ে যেত। ওর রেফারেন্স এই আমরা সেখানে খুব কম অল্প টাকায় অপারেশনটা করতে পেরেছিলাম। বন্ধুর থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই বন্ধুকে আমি আগের রাতেই এ ব্যাপারে হিন্ড দিয়ে ফেলেছিলাম ও বন্ধু আমাকে সেই হিসেবেই সকাল সকাল চলে আসবে বলে কথা দিয়েছিল। সকাল সকাল না আসলেও দুপুরের পরে তো অবশ্যই আসতে হতো আর সেও তখনই আসতো। একটা ন্যূনতম সময়ের প্রয়োজন তাই হিসেবেই আসলে পরিকল্পনাটি করা। আর এর মধ্যেই আবার দুপুর হয়ে গেল। সকাল সকাল আবার উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। এই প্রায় দশটা বাজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে এসে দেখি মামা ওষুধ পত্র খেয়ে রেডি হয়ে আছেন। সুস্থ দেখাচ্ছিল মামাকে। সকালে নাস্তা আনা হয়েছিল সবার জন্য। মামা আমন্ত্রণ জানালেন আমাকে ঘুম থেকে ওঠার পর। সকলের জন্য আনা হয়েছিল কিন্তু তখন আর আমার নান রুটি ডাল ভাজি খেতে ইচ্ছে করছিল না। কেননা আমি সকালবেলা এভাবেও খেয়েছো কি কিছুদিন ধরে আমার সকালে খাওয়াই হচ্ছে না। প্রায় ঘুমাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে তখন যে সময় থাকে আমি ডিরেক্ট দুপুরের খাবারই খেয়ে ফেলি। ১১ঃ০০ টা বেজে গিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। হাসপাতালের বিল দিতে হতো ঐদিন। তাই মামার শালাকে বললাম বিলের টাকা এবং দুপুরের খাবার নিয়ে আসতে। এর মধ্যে উনি চলে গেলেন নিয়ে। আমি আলাপ করতে লাগলাম। আজকে যে রিলিজ দিয়ে দিবে সেটা নিশ্চিত ছিল। মাত্র ডাক্তার আসার অপেক্ষা। শান্ত ওকে ফোন দিলাম। শান্ত বলল দুপুরে লাঞ্চ করে আসছে। দুপুরে লাঞ্চ শেষ করে এর মধ্যে দুপুর দুইটা নাগাদ সে চলেও আসলো

এসেই হাসপাতালের ডিসচার্জ পেপার রেডি করতে লাগলো। এরমধ্যে চলো চলে আসলেন ডিসচার্জ করার জন্য। ম্যানেজারের রুমে যখন গেলাম এখন আমাদের হাতে বিল ধরিয়ে দিল ১১ হাজার। আমি মামার শালাকে আগে থেকেই ২৫ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেছিলাম। সে কথামতো নিয়েও এসেছে। মাত্র ১১২০০ টাকায় আমরা বিল কমপ্লিট করতে পেরেছিলাম। ম্যানেজারের রুম থেকে শান্ত নিচে ওষুধের বিলগুলো করতে গেল। আমি টাকা আনতে মামার কাছে গেলাম এবং বিলের কপি দেখাতে। মধ্যে শান্ত আমাকে নিচে যেতে বলল ওষুধের গ্রুপ নেওয়ার জন্য। আমি গেলাম সেখানে ওষুধের বিল হয়েছিল প্রায় আড়াই হাজার টাকা আর নতুন ওষুধ সপ্তাহের জন্য ছিল হাজার টাকার মত। আবারো ম্যানেজারের রুমে গিয়ে অনার্স সিগনেচার নিয়ে এবার একেবারে পাকাপোক্তভাবে ছাড়পত্র নিয়ে আসলাম। শুধু ডাক্তারের অপেক্ষা ছিল। এর মধ্যেই বিকাল চারটা বেজে গেল। ডাক্তার সাহেব আসলেন। মামার অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন, মামার অবস্থা বুঝলেন আর উনার সাথে যে পাইপটা লাগানো ছিল শেষ পাইপ সেটা উনি খুলে পরিষ্কার করে দিলেন এবং বললেন আরো দুই তিনদিন রেখে দিতে কারণ সে পাইপে তখনও রক্ত এসে জমা হচ্ছিল। অইটা ছিল হচ্ছে অপারেশনের পরে যেগুলো ভিতরে রয়ে গিয়েছিল সেই দূষিত রক্ত। এভাবেই মামার অবস্থা বুঝে উনি বললেন বাড়ি চলে যেতে আর সেখানে অবস্থান করতে হবে না। ডাক্তার সাহেবের গ্রীন সিগনাল পেতেই আমরা বুঝে ফেললাম যে আজকে বাড়িতে যেতে পারবো। আমি আগে থেকে সবকিছু রেডি করে রেখেছিলাম। ওষুধপত্র নিয়ে বন্ধুর থেকে এবার প্রস্থান করার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। আয়া খালা আসলেন তাদেরকে মামা কিছু টিপস দিয়ে দিলেন এবং দোয়া চেয়ে নিলেন। মোট ১৬ হাজারের মতো বিল এসেছিল ওষুধপত্র সহ। আমরা আর দেরি করলাম না সবকিছু চেক করে আগে থেকেই তো প্যাকিং করা ছিল। বেরিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। এর মধ্যে যারা ছিলেন কলোনিতে তাদের সবাইকে মামা মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে আসলেন। এর মধ্যে আমরা রেডি হয়ে নিচে নেমে গেলাম লিফট দিয়ে ছোট খালা আসছেন। উনাকে বললাম আমাদের রিলিজ হয়ে গেছে এখন মামাকে নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটি অটোকে ডাকলাম। মামার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আর মামাকে গিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়েই আমি রওনা দিয়ে দিলাম। একটি সফল অপারেশনের পর কিছুদিন পরে সুস্থ হয়ে গেলেন মামা। বেশ ভালো লাগলো আমার ওনাকে সুস্থ দেখে।

Leave a Comment